শবে বরাতের আমল যা করনীয় ও বর্জনীয়

শাবান মাসের একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ রাত হলো শবে বরাত। এই রাতে আল্লাহ তায়ালা মুশরিক, যারা সুন্নত মোতাবেক চলে না, হিংসুক এবং বিদআতে লিপ্ত ব্যক্তিদের ছাড়া বাকি সকল বান্দাদের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন। তাই আজকের এই নিবন্ধে জায়েজ আছে এমন কিছু শবে বরাতের আমল সম্পর্কে শেয়ার করব।

সুতরাং, শবে বরাতের এই সাধারণ ক্ষমায় থাকার জন্য আমাদের প্রথম এবং প্রধান কর্তব্য হলো শিরক, হিংসা-বিদ্বেষ এবং বিদআত থেকে বিরত থাকা। আমাদেরকে রাসুল (সাঃ) এর সুন্নতকে আঁকড়ে ধরতে হবে।

আরো পড়ুন:- ঘুমানোর দোয়া ও আমল | ঘুম থেকে উঠার দোয়া

শবে বরাতের রাতে অনেকে হালুয়া-রুটি বানানো, আতশবাজি ও ফটকা বাজানো ইত্যাদি বিদআতের কাজ করে থাকেন। কিন্তু এইসব কাজ থেকে বিরত থাকাই উচিত এবং এটাই আমাদের ঈমানী দায়িত্ব।

যদিও বিশেষ কোনো আয়োজন না করেও শবে বরাতের রাতে ইবাদত-বন্দেগী, জিকির-আজকার এবং নফল নামাজ পড়া জায়েজ আছে। কারণ, হাদিস দ্বারা প্রমাণিত যে এই রাতে আল্লাহ তায়ালা ক্ষমা ঘোষণা করেন।

মধ্য শাবানের এই রাতে আমরা দলবদ্ধভাবে মসজিদে গমন করে বিভিন্ন নামাজ আদায় করার চেষ্টা করি। তবে, দলবদ্ধভাবে পড়া যেসব নামাজ জায়েজ নয়, সেগুলো থেকে বিরত থাকতে হবে।

একটি উদাহরণ দিয়েছেন যে, মসজিদে প্রবেশের দোয়া সম্পর্কে যদি সকলে একত্রিত হয়ে মসজিদের দোয়া পড়ে এবং মোনাজাত করে মসজিদে প্রবেশ করে, তাহলে এটি উচিত নয়। এটি shab e barat er amol এর একটি ভিডিওতে বলেছেন।

মুফতি আহমাদুল্লাহ

শবে বরাতের আমল সমূহ

শবে বরাতের নির্দিষ্ট কোন আমল কোরআন ও হাদিসে স্পষ্টভাবে উল্লেখ না থাকলেও, আমরা কিছু উত্তম জায়েজ আমল করতে পারি। যা নিচে দেওয়া হল:

১/ নফল ইবাদতে লিপ্ত থাকা

১৪ই শাবান দিবাগত রাতে জাগরণ করে নফল ইবাদত-বন্দেগী, যিকির-আযকার ও তিলাওয়াতে লিপ্ত থাকা। এ রাতে যে কোন নফল নামায পড়ুন, যে কোন সূরা দিয়ে পড়তে পারেন- কোন নির্দিষ্ট সূরা দিয়ে পড়া জরূরী নয়।

যত রাকআত ইচ্ছা পড়তে পারেন। আরও মনে রাখবেন নফল নামায ঘরে পড়াই উত্তম। একান্ত যদি ঘরে নামায পড়ার পরিবেশ না থাকে তাহলে মসজিদে পড়তে পারেন।

বর্তমানে শবে বরাত ও শবে কদর উপলক্ষ্যে ইবাদত করার জন্য মসজিদে ভীড় করার একটা রছম হয়ে গিয়েছে- এর ভিত্তিতে কোন কোন মুফতী শবে বরাত ও শবে ক্বদরে ইবাদত করার জন্য মসজিদে একত্রিত হওয়াকে মাকরূহ ও বিদআত বলে ফতুয়া দিয়েছেন। (দেখুন। فتادی محمودیة جـ তাই যথাসম্ভব ঘরেই ইবাদত করা উত্তম হবে।

২/ বেশি বেশি দোয়া করা

এ রাতে বেশী বেশী দোয়া করা। কেননা আল্লাহ তা’আলা সূর্যাস্তের পর থেকে সুবহে সাদেক পর্যন্ত দুনিয়ার আসমানে এসে মানুষকে ক্ষমা চাওয়ার জন্য, রিযিক চাওয়ার জন্য, রোগ-শোক, বিপদ-আপদ থেকে মুক্তি ও বিভিন্ন মাকছুদ চাওয়ার জন্য আহ্বান করতে থাকেন, তদুপরি আর এক হাদীছের বর্ণনা অনুযায়ী এই রাতে মানুষের সারা বৎসরের হায়াত মওত ও রিযিক দৌলত ইত্যাদি লেখা হয়ে থাকে। অতএব এ রাতে আল্লাহ্র কাছে বেশী বেশী করে দুআ করা চাই।

আরো পড়ুন – তওবা নামাজের নিয়ম [দোয়া, অর্থ, নিয়ত, শর্ত, রাকাত]

৩/ কবর জিয়ারত করা

হাদীছ শরীফে আছে, এই রাতে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরস্থানে গিয়েছিলেন এবং মৃত মুসলমানদের জন্য মাগফিরাতের দুআ করেছিলেন। তাই এই রাতে কবর যিয়ারতে যাওয়া যায়।

তবে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরস্থানে একাকী গিয়েছিলেন- কাউকে সাথে নিয় আড়ম্বর সহকারে যাননি। তাই এ রাতে দলবল নিয়ে সমারোহ না করে আড়ম্বরের সাথে না করে নীরবে কবর যিয়ারতেও যাওয়া যায়।

৪/ মৃতদের জন্য দোয়া করা

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত মুসলমানদের জন্য মাগফিরাতের দুআ করেছিলেন। এটা ঈছালে ছওয়াবের অন্তুর্ভুক্ত। তাই এ রাতে মৃতদের জন্য দুআ করা ছাড়াও অন্যান্য পদ্ধতিতেও ঈছালে ছওয়াব করার অবকাশ রয়েছে। যেমন কিছু দান-খয়রাত করে বা কিছু নফল ইবাদত- বন্দেগী করে তার ছওয়াব মৃতদেরকে বখশে দেয়া। এরূপ করাও উত্তম হবে।

আরো পড়ুন – তওবা নামাজের নিয়ম [দোয়া, অর্থ, নিয়ত, শর্ত, রাকাত]

৫/ নফল রোযা রাখাও শবে বরাতের আমল

পরের দিন অর্থাৎ, ১৫ই শাবান নফল রোযা রাখা উত্তম যেটা শবে বরাতের রোজা নামেই অধিক পরিচিত। শাবানের রোজা ফরজ কিংবা ওয়াজিব নয় বরং মুস্তাহাব। তথা এটাতে অন্যান্য সাধারণ নফল রোজার চাইতে সাওয়াব বেশি। এই রাতে যতটা সম্ভব কোরআন শরীফ, দরুদ শরীফ এবং অন্যান্য নফল ইবাদত করবে পুরো রাত জাগা জরুরী নয়।

দিনের মধ্যে রোজা রাখা এবং রাত্রে একাকী বিভিন্ন নফল ইবাদতের মশগুল থাকা সবচেয়ে ভালো। যেহেতু দলবদ্ধ হয়ে এ রাতে ইবাদত করা কোরআন এবং হাদিস দ্বারা প্রমাণিত নয় তাই একাকী করাই উত্তম।

উপরোল্লেখিত ৫টি বিষয় ব্যতীত শবে বরাত উপলক্ষ্যে আর বিশেষ কোন আমল কুরআন সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত নয়। শবে বরাত উপলক্ষ্যে হালুয়া রুটি তৈরী করা, মোমবাতি জ্বালানো, আতশবাজী ও পটকা ফোটানো ইত্যাদি নিষিদ্ধ। এগুলো রছম, বিদআত ও গোনাহের কাজ।

বিঃদ্রঃ আমি উপরোক্ত আমলগুলো ‘আহকামে জিন্দেগী’ থেকে শেয়ার করেছি, পৃষ্ঠা ৩৪৩ এবং ৩৪৪। আর এই কিতাবে গোসলের কথা বললে কাছে এটা আমি শেয়ার করিনি, কারণ বিভিন্ন ওলামায়ে কেরাম এটা নিষেধ করেছেন। এটা যাচাই করে আপনাদের কর্তব্য।

শবে বরাতে করনীয়

আল্লাহ তায়ালা শাবানের মধ্যে রজনীতে বান্দাদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করবেন। তবে এক্ষেত্রে আমাদের কিছু কারণীয় রয়েছে যা নিচে দেয়া হল:

  1. কুরআন তিলাওয়াত
  2. যে কোন সূরা দিয়ে নফল নামায
  3. যিকির আযকার
  4. দু’আ ইস্তিগফার
  5. কবর জিয়ারত
  6. মৃত ব্যক্তিদের মাগফেরাতের দোয়া করাও সাওয়াবের কাজ।

উক্ত ইবাদাতসমূহ সমবেত ভাবে নয় বরং একাকী করতে হবে। উল্লেখ্য উক্ত রাতে কোন ধরা বান্ধা নিয়মে নফল নামায পড়া হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়। উল্লেখ্য লাইলাতুল বারা’আতের পরদিন রোযা রাখা নফল ইবাদত, কেউ শা’বানের ১৩,১৪,১৫ তারিখে রোযা রাখতে পারলে উত্তম। আর অবশ্যই বিভিন্ন কুসংস্কার বর্জন করতে হবে যা নিচে দেয়া হল

আরো পড়ুন – অযুর দোয়া বাংলা ,আরবি উচ্চারণ ও ফজিলত

শবে বরাতে বর্জনীয়

আপনাদের এলাকায় আছি কিনা জানিনা, আমাদের গ্রাম অঞ্চলে দেখা যায় শবে বরাতের দিনে বা রাত্রে বিভিন্ন কুসংস্কার পালন করে। যা থেকে আমাদের সম্পূর্ণ রুখে থাকতে হবে এবং অন্যকে রুখতে হবে:

  • শিরিক হতে বেঁচে থাকতে হবে – কেননা আল্লাহতালা যে সাধারন ক্ষমা ঘোষণা করবেন সেখান থেকে মুশরিকদের বাদ দেয়া হবে।
  • মা-বাবার নাফরমানি হতে বেঁচে থাকা – মা-বাবার নাফরমানি করা বা তাদেরকে কষ্ট দেয়া কবিরা গুনাহ। তাই আমাদেরকে এটা থেকে সদা সর্বদা বেঁচে থাকতে হবে।
  • টাখনুর নিচে কাপড় পরিধান করা থেকে বিরত থাকা – হাদিসে আছে – যে টাখনুদ্বয়ের নীচে কাপড় ঝুলিয়ে পরা হত তা আগুনের মধ্যে জ্বলবে। সুত্র – হাদিস বিডি
  • নেশা করা, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা এবং হিংসা বিদ্বেষ থেকেও আমাদের বেঁচে থাকতে হবে, যাতে আমরা আল্লাহতালার ক্ষমা পায়।
  • আতশবাজী
  • হালুয়া রুটি, শিরণী- তাবাররুক
  • মাইকে কুরআন তিলাওয়াত ও শবীনা
  • আলোকসজ্জা করা
  • মসজিদে বা বাড়ীতে জমায়েত হয়ে বড় আওয়াজে প্রচলিত মীলাদ-কিয়াম করা
  • সমবেত এবং আনন্দ-ফূর্তির সাথে গোরস্থানে যাওয়া
  • মেলা বসানো
  • জামা’আতের সাথে সালাতুত তাসবীহ বা তাহাজ্জুদের নামায পড়া ইত্যাদি।

পরিশেষে বলতে চাই, শবে বরাতের আমল যা উপরে শেয়ার করা হয়েছে তা সুন্দরভাবে আদায় করবে এবং পালন করব। শুধু তাই নয়, যে সমস্ত করণীয় ও বর্জনীয় রয়েছে সেগুলো আমাদেরকে অবশ্যই ফলো করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকল গুনাহ গুলো মাফ করে দিক। আমিন।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *