ঘুমানোর দোয়া ও আমল | ঘুম থেকে উঠার দোয়া
সারাদিন আমরা বিভিন্ন পরিশ্রম করে থাকি, আর ক্লান্তি দূর করার জন্য আল্লাহ তাআলা আমাদের সুন্দর একটা রাত নির্ধারণ করে দিয়েছেন। যেখানে আমরা পর্যাপ্ত পরিমাণের ঘুম যেতে পারলে আমাদের সারাদিনের ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। আমাদেরকে অবশ্যই আল্লাহর রাসূলের আদর্শে আদর্শিত হতে হবে, রাসূল সাঃ এর জীবনে তিনি ঘুমানোর সময় কি দোয়া পড়তেন বা ঘুমানোর দোয়া এবং ঘুম থেকে উঠার দোয়া সম্পর্কে আজকে আলোচনা করা হোক।
আল্লাহতালা দিনকে রিজিক উপার্জনের সময় আর রাতকে করেছেন অবরণ। আল্লাহ তাআলা বলেন ”তোমাদের জন্য নিদ্রাকে করে দিয়েছি বিশ্রাম, করেছি রজনীকে আবরণ, এবং করেছি দিনকে জীবিকা আহরণের জন্য (উপযোগী)” (সূরা নাবা আয়াত ৯,১০,১১)
ঘুমানোর দোয়া এবং জাগ্রত হওয়ার দোয়া
ঘুম মানব জীবনের খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা অংশ, ঘুমের মাধ্যমে শরীরের অনেক উপকারী ঘটে, সারাদিনের বিশ্রামকে কাটিয়ে এনে দেই সুন্দর মুহূর্ত। ঘুমের মাধ্যমে মানবদেহের ক্ষয়িষ্ণু কোষগুলি পুনর্গঠিত হয় এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। তাই ঘুমানোর দোয়া এবং ঘুম থেকে উঠে যে দোয়া পড়বেন নিচে দেওয়া হয়:-
১ নং দোয়া:- اَللّٰهُمَّ بِاسْمِكَ اَمُوْتُ وَاَحْيَا
অর্থ: হে আল্লাহ আমি তোমারই নামে মৃত্যুবরণ করি এবং জীবিত হই।
২ নং দোয়া: بِاسْمِكَ رَبِّـىْ وَضَعْتُ جَنْبِيْ وَبِكَ اَرْفَعُهٗ اِنْ اَمْسَكْتَ نَفْسِيْ فَارْحَمْهَا وَاِنْ اَرْسَلْتَهَا فَاحْفَظْهَا بِمَا تَحْفَظُ بِه عِبَادَكَ الصَّالِحِيْنَ
অর্থ: হে আমার প্রতিপালক! তোমার নামে আমার পার্শ্বদেশ রাখলাম (শয়ন করলাম) এবং তোমার নামেই তা উঠাবো (জাগ্রত হবো)। তুমি যদি আমার হায়াত শেষ করে দাও তাহলে আমার প্রতি দয়া করো। আর যদি হায়াত শেষ না করো, তাহলে নেককার বান্দাদের মত হেফাজত করো। (সহীহ বুখারী, হাদীস: ৬০৮৫)
ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে পড়ার দোয়া: اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْ اَحْيَانَا بَعْدَ مَا اَمَاتَنَا، وَاِلَيْهِ النُّشُوْرُ
অর্থ: সকল প্রশংসা আল্লাহ পাকের যিনি আমাদেরকে মৃত্যু দানের পর জীবিত করেছেন এবং মৃত্যুর পর তাঁরই নিকট আমাদের প্রত্যাবর্তন করতে হবে। (সহীহ বুখারী, হাদীস: ৬৩২৪)
ঘুমের পূর্বের আমল
১ নং আমল তাসবীহে ফাতেমী
- سُبْحَانَ اللهِ (আল্লাহ পূত-পবিত্র) ৩৩ বার।
- اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ (সকল প্রশংসা আল্লাহর) ৩৩ বার।
- اَللهُ اَكْبَرُ (আল্লাহ সবচেয়ে বড়) ৩৪ বার।
ফযীলত: হযরত আলী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত ফাতেমা রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট একজন খাদেম চাইতে গেলেন, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সাক্ষাৎ হলো না। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট আসলেন এবং ইরশাদ করলেন, তোমরা যা চেয়েছ আমি কি তোমাদেরকে তার চেয়ে উত্তম জিনিসের কথা বলে দিবো না? তোমরা ঘুমানোর পূর্বে সুবহা-নাল্ল-হ ৩৩ বার, আলহামদুলিল্লা-হ ৩৩ বার, আল্ল-হু আকবার ৩৪ বার পড়বে। (সহীহ বুখারী, হাদীস: ৫৩৬১)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি ঘুমানোর পূর্বে উপরোক্ত তাসবীহগুলো পাঠ করবে সে এক হাজার নেকী পাবে। (সুনানে নাসাঈ, হাদীস: ১৩৪৮)
২ নং আমল আয়াতুল কুরসী পড়া।
ফযীলত: আল্লাহর পক্ষ থেকে সকাল পর্যন্ত একজন হেফাজতকারী নিযুক্ত থাকবে এবং শয়তান তার কাছে আসবে না। (সহীহ বুখারী, হাদীস: ২৩১১)
আল্লাহ তার ঘর ও প্রতিবেশীদের ঘর নিরাপদ রাখবেন। (বায়হাকী, শু‘আবুল ঈমান, হাদীস: ২৩৯৫)
৩ নং আমল সূরা বাক্বারার শেষ দুই আয়াত পড়া
آمَنَ الرَّسُولُ بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْهِ مِنْ رَبِّهِ وَالْمُؤْمِنُونَ كُلٌّ آمَنَ بِاللَّهِ وَمَلَائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِنْ رُسُلِهِ وَقَالُوا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيرُ لَا يُكَلِّفُ اللَّهُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا لَهَا مَا كَسَبَتْ وَعَلَيْهَا مَا اكْتَسَبَتْ رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذْنَا إِنْ نَسِينَا أَوْ أَخْطَأْنَا رَبَّنَا وَلَا تَحْمِلْ عَلَيْنَا إِصْرًا كَمَا حَمَلْتَهُ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِنَا رَبَّنَا وَلَا تُحَمِّلْنَا مَا لَا طَاقَةَ لَنَا بِهِ وَاعْفُ عَنَّا وَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا أَنْتَ مَوْلَانَا فَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ
অর্থ: রাসূল বিশ্বাস রাখেন ঐ সকল বিষয়ের প্রতি যা তাঁর কাছে অবতীর্ণ হয়েছে তাঁর পালকতার পক্ষ থেকে এবং মুমিনগণও বিশ্বাস রাখে। সবাই বিশ্বাস রাখে আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাদের প্রতি, তাঁর কিতাবসমূহের প্রতি, তাঁর রাসূলগণের প্রতি। তারা বলে, আমরা তাঁর রাসূলদের মধ্যে কোনো তারতম্য করি না। তারা বলে, (হে আল্লাহ তোমার আদেশ ও নিষেধ) আমরা শুনেছি এবং মেনে নিয়েছি। হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা তোমার কাছে ক্ষমা চাই। তোমারই দিকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে।
আল্লাহ কাউকে সাধ্যাতীত কোনো কাজের ভার দেন না। প্রত্যেকে যা ভাল কাজ করবে তার প্রতিদান পাবে, আর যা মন্দ কাজ করবে তার শাস্তি ভোগ করবে।
হে আমাদের প্রতিপালক! যদি আমরা বিস্মৃত হই অথবা ভুল করি তবে তুমি আমাদেরকে পাকড়াও করো না। হে আমাদের প্রতিপালক তুমি আমাদের উপর এমন গুরুদায়িত্ব অর্পণ করো না যেমন দায়িত্ব অর্পণ করেছিলে আমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। হে আমাদের প্রতিপালক! এমন ভার-বোঝা আমাদের উপর অর্পণ করো না যা বহন করার শক্তি আমাদের নেই। আমাদের পাপ মোচন করো, আমাদেরকে ক্ষমা করো, আমাদের প্রতি দয়া করো, তুমিই আমাদের অভিভাবক। সুতরাং কাফির সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য করো। (সূরা বাক্বারা, আয়াত: ২৮৬)
ফযিলত: রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি রাতে সূরা বাক্বারার শেষ দুই আয়াত পড়বে, ঐ ব্যক্তির জন্য তা যথেষ্ট হয়ে যাবে। (অর্থাৎ জিনের ক্ষতি, মানুষের ক্ষতি, সকল পেরেশানি ও মুছিবত থেকে হেফাযতের জন্য যথেষ্ট হবে। কারো কারো মতে রাতের সকল অজিফার জন্য যথেষ্ট হবে) (সহীহ বুখারী, হাদীস: ৪০০৮, সহীহ মুসলিম, হাদীস: ১৮৭৮)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন হযরত জিবরিল আলাইহিস সালাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলেন, আপনি এমন দুটি নূরের সুসংবাদ গ্রহন করুন যা অন্য কোনো নবীকে দেওয়া হয়নি, একটি হল সুরা ফাতেহা অপরটি হল সুরা বাক্বারার শেষ দু আয়াত। আপনি এর থেকে যা পড়বেন তা আপনাকে দেওয়া হবে। (সহীহ মুসলিম, হাদীস: ১৮৭৭)
৪ নং আমল সূরা ইখলাস, ফালাক্ব ও নাস ৩ বার করে পড়ে হাতে ফুঁ দিয়ে শরীরে হাত বুলিয়ে নেওয়া।
৫ নং আমল সূরা কাফিরূন পড়া।
৬ নং আমল সূরা মুলক ও সূরা আলিফ লাম মীম সাজদাহ পড়া।
ঘুমে ভয় পেলে পড়ার দোয়া
দেখা গেছে যে, আমাদের মধ্যে অনেকেই ঘুমের মধ্যে ভয় পেয়ে জাগ্রত হয়ে যায়। এরকম আমারও অনেকবার হয়েছে এমনকি এর পর থেকে আর ঘুমও আসে না। এক্ষেত্রে আপনারা নিম্নলিখিত দুয়াটি পড়তে পারেন:-
اَعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ مِنْ غَضَبِه وَعَذَابِه، وَشَرِّ عِبَادِه، وَمِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِيْنِ، وَاَنْ يَّحْضُرُوْنِ
অর্থঃ আমি আল্লাহ তা‘আলার পূর্ণাঙ্গ কালিমার উসীলা দিয়ে তাঁর ক্রোধ, শাস্তি এবং তাঁর বান্দাদের অনিষ্টতা থেকে আশ্রয় চাচ্ছি এবং শয়তানের ওয়াসওয়াসা ও তার উপস্থিতি থেকে পানাহ চাচ্ছি। (সুনানে তিরমিযী, হাদীস: ৩৫২৮/ মুসনাদে আহমাদ, হাদীস: ৬৬৯৬)
ঘুম না আসলে এ দোয়া পড়বে
প্রতিনিয়ত ডিপ্রেশন কিংবা টেনশনে থাকি বিদায় ঘুম আসতে দেরি হয় বা ঘুম আসে না। যদি আপনার প্রতিনিয়তই ঘুম না আসে তাহলে আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রার্থনা করার পাশাপাশি নিম্নলিখিত দোয়াটিও পড়বেন:-
اَللّٰهُمَّ رَبَّ السَّمٰوٰتِ السَّبْعِ وَمَا اَظَلَّتْ، وَرَبَّ الْاَرْضِيْنَ وَمَا اَقَلَّتْ، وَرَبَّ الشَّيَاطِيْنِ وَمَا اَضَلَّتْ، كُنْ لِّىْ جَارًا مِّنْ شَرِّ خَلْقِكَ كُلِّهِمْ جَمِيعًا اَنْ يَّفْرُطَ عَلَيَّ اَحَدٌ مِّنْهُمْ اَوْ اَنْ يَّبْغِيَ، عَزَّ جَارُكَ، وَجَلَّ ثَنَاؤُكَ، وَلَاۤ اِلٰهَ غَيْرُكَ، وَلَاۤ اِلٰهَ اِلَّا اَنْتَ
অর্থঃ হে আল্লাহ! যিনি সপ্ত আকাশের প্রতিপালক এবং ঐ সকল বস্তুর প্রতিপালক, যার উপর সপ্ত আকাশ বিস্তার করে আছে এবং যিনি সমগ্র জমিন এবং জমিন যা বহন করে আছে তার প্রতিপালক এবং যিনি সমস্ত শয়তান ও শয়তান যাদেরকে গোমরাহ করেছে তাদের প্রতিপালক। তুমি সমস্ত মাখলুকের অনিষ্ট থেকে আমার রক্ষাকারী এবং আশ্রয়দাতা হয়ে যাও। যাতে এ সকল মাখলুকের মধ্য থেকে কোন মাখলুক আমার উপর অত্যাচার-অবিচার করতে না পারে। তোমার আশ্রিত ব্যক্তি সম্মানিত এবং তোমার প্রশংসা অতি মহান। তুমি ছাড়া আর কোনো মা‘বূদ নেই। একমাত্র তুমি ইবাদতের যোগ্য। (সুনানে তিরমিযী, হাদীস: ৩৫২৩)