ইশরাকের নামাজ পড়ার নিয়ম ও ফজিলত

ইশরাক এটি একটি আরবি শব্দ যার বাংলা অর্থ হচ্ছে আলোকিত হওয়া। কমবেশি আমরা সকলেই জানি সূর্য উদিত হওয়ার পরে পৃথিবী আলোকিত হয় এবং এরপরে হাদিসের মধ্যে যে নামাজের কথা বলা হয়েছে সেটা হচ্ছে ইশরাকের নামাজ। সকালে সূর্যোদয়ের পরে যে নামাজটা পড়া হয় সেটাকে ইশরাকের নামাজ বলে।

আজকে মূলত আপনাদের সাথে ইশরাকের নামাজ পড়ার নিয়ম এবং বিধান সম্পর্কে আলোচনা করা হবে। তাই আপনারা যারা বেশি বেশি নফল নামাজ পড়তে ভালোবাসেন তারা আজকের এই আর্টিকেলটা পড়তে পারেন। এখান থেকে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা নামাজ ‘ইশরাকের নামাজ’ সম্পর্কে জানতে পারবেন।

কসর নামাজের নিয়ম ও বিধান

ইশরাক হচ্ছে একটি নফল নামাজ যেটা নবী করিম (সাঃ) নিজে পড়তেন এবং সাহাবায়ে কেরামদেরকে শিক্ষা দিতেন। যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাতের সাথে পড়ার পরে, একই স্থানে বসে জিকির-আজকার করে সূর্যোদয়ের পর ইশরাকের নামাজ পড়বে ইনশাল্লাহ তায়ালা তাকে একটি পূর্ণাঙ্গ হজ এবং ওমরার সাওয়াব দান করবেন।

সকালে সূর্য উদয় হওয়ার পর থেকে সূর্য এক বর্শা পরিমাণ উদিত মধ্যাকাশে আসার আগ পর্যন্ত ইশারাকের নামাজ পড়া যাবে। জাগো নিউজ থেকে জানতি পারি, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সকালে সূর্য উদয়ের সাথে সাথে নামাজ পড়তেন না, বরং সূর্য এক বর্ষা উদিত হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতেন।

ইশরাকের নামাজ পড়ার নিয়ম

ইশরাকের নামাজও অন্যান্য নামাজের মত দুই রাকাত পড়বে, কারো মতে আবার দুই দুই রাকাত করে চার রাকাত পড়বে। তবে নিয়ত করার সময় অবশ্যই ইশরাকের নিয়ত করবে, সূর্য উদয় হওয়ার ১০-১৫ মিনিট পরে এই নামাজ আদায় করা হয়ে থাকে। আর সূর্য আকাশের মধ্যরেখায় আসা পর্যন্ত ইশরাকের সময় থাকে।

এখানে একটা বিষয় সম্পর্কে এখতেলাফ রয়েছে, কারো কারো মতে সূর্য উদয় হওয়ার পরে দুইটা নামাজ রয়েছে ইশারাকের নামাজ এবং চাশতের নামাজ। সূর্য উদয় হওয়ার পর দুইটা নামাজ রয়েছে এটাও হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।

গর্ভবতী মায়ের নামাজের নিয়ম

তো এই ক্ষেত্রে, ইশরাকের নামাজ সর্বনিম্ন ২ রাকাত এবং সর্বোচ্চ ৪ রাকাত।‌ ঠিক একইভাবে চাশতের নামাজ সর্বনিম্ন ২ রাকাত এবং সর্বোচ্চ ১২ রাকাত। তবে হাদিসের মধ্যে সুনির্দিষ্ট কোন রাকাত উল্লেখ নেই, তবে রাসুল (সাঃ) দুই দুই রাকাত করে চার রাকাত পড়তেন এটাই হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।

নফল নামাজের মধ্যে তাহাজ্জুদ নামাজের পরে যে নামাজটি ফজিলতপূর্ণ সেটা হচ্ছে ইশরাকের নামাজ। তাই মুমিন মুসলমানের উচিত প্রতিনিয়ত এই নফল নামাজগুলো পড়ে নিজের আমলের পাল্লা ভারী করা।

ইশরাকের নামাজ কয় রাকাত

ইশরাকের নামাজ কয় রাকাত এটা সরাসরি কোথাও উল্লেখ নেই। তবে এতোটুকু বলা যায় যে, ইশরাকের নামাজ সর্বনিম্ন দুই রাকাত এবং সর্বোচ্চ চার রাকাত। আর চাশতের নামাজ সর্বনিম্ন দুই রাকাত এবং সর্বোচ্চ বারো রাকাত। আরেকটা কথা হচ্ছে ইশরাক এবং চাশতের নামাজ যে কোন সূরা/কেরাত দিয়ে পড়া যায়।

ইশরাকের নামাজ পড়ার ফজিলত

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি জামাতের সাথে ফজরের নামায পড়ে সূর্য উদয় পর্যন্ত আল্লাহ তা‘আলার যিকিরে মশগুল থাকে, তারপর (সূর্যোদয়ের ১৫ মিনিট পর) দুই রাকাত নামায পড়ে, সে পরিপূর্ণ হজ্জ ও উমরার সওয়াব লাভ করবে। গুরুত্ব প্রদানের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কথাটি তিনবার বলেছেন। (সুনানে তিরমিযী, হাদীস: ৫৮৬)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, হে আদম সন্তান! তুমি দিনের শুরুতে আমার জন্য ৪ রাকাত নামায পড়ো, দিনের শেষ পর্যন্ত তোমার সকল কাজ সম্পন্ন করার জন্য আমি যথেষ্ট হয়ে যাবো। (সুনানে তিরমিযী, হাদীস: ৪৭৫)

ইশরাকের নামাজ কয়টা পর্যন্ত পড়া যায়

ইশারাকের নামাজ সূর্য উদয় হওয়ার ১০-১৫ মিনিট পর থেকে সূর্য পৃথিবীর মধ্যরেখায় আসা পর্যন্ত পড়া যায়। তাই আপনি যদি ফজিলতপূর্ণ এই নামাজ পড়তে চান, তাহলে ফজরের নামাজ জামাতের সাথে পড়ে সূর্য উদয় হওয়ার ১০ থেকে ১৫ মিনিট একই স্থানে বসে জিকির আজকার করুন। পরবর্তীতে যখন সুযোগ হয়ে যাবে ১০ থেকে ১৫ মিনিট কিংবা ২০ মিনিট পরে ২ রাকাত ৪ বাবার রাকাত পর্যন্ত ইসরাকের নামাজ এবং চাশতের নামাজ পড়ুন।

আর চাইলে মহিলারা বাড়িতেও এই নামাজটা পড়তে পারে, এর জন্য ফজরের নামাজ পড়ে নিজ জায়গাতে বসে থাকবে সূর্য উদয় হওয়ার ১০-১৫/২০ পর্যন্ত, তারপরে ইশারাকের নামাজটা আদায় করবে।

তওবা নামাজের নিয়ম ও তওবার দোয়া

আর মহিলাদের মধ্যে যাদের কাজকর্ম রয়েছে তারা চাইলে ফরজ নামাজ পড়ে কাজ কর্ম সেরে নিতে পারবে এবং পরবর্তীতে সূর্যোদয় হওয়ার পর এই নামাজটা পড়ে নেবে (ইনশাআল্লাহ এ ক্ষেত্রেও পূর্ণ সাওয়াব পাবে)।

ইশরাকের নামাজ কিভাবে পড়তে হয়?

ইশরাক নামাজের সবচাইতে উত্তম পদ্ধতি হলো ফজরের ফরজ নামাজ জামাতের সাথে পড়ে, উক্ত জায়গায় সূর্য উদয় হওয়া পর্যন্ত জিকির-আজকারের মাধ্যমে বসে থাকবে। সূর্য উদয় হওয়ার অন্তত ১৫ মিনিট পরে দুই রাকাত বা দুই দুই রাকাত করে চার রাকাত যে কোন সূরা দিয়ে ইশরাকের নামাজ পড়বে।

এশরাক কি?

এশরাক এটি একটি আরবি শব্দ যার বাংলা অর্থ হচ্ছে আলোকিত হওয়া। যেহেতু সূর্যোদয়ের মাধ্যমে পৃথিবী আলোকিত হয়ে এবং সূর্য উদয়ের পরে এই নামাজ পড়া হয় তাই এটাকে ইশরাকের নামাজ বলে।

ইশরাক ও চাশতের নামাজ কত রাকাত?

কেউ কেউ ইশরাক ও চাশতের নামাজ একই এরকম বলে। তবে দারুল উলুম দেওবন্দের ওয়েবসাইট এর মতে যদি দুটোই আলাদা নামাজ হয় তাহলে ইশরাকের নামাজ সর্বনিম্ন দুই রাকাত এবং সর্বোচ্চ চার রাকাত। আর চাশতের নামাজ সর্বনিম্ন দুই রাকাত এবং সর্বোচ্চ বারো রাকাত।

সকালের সালাতের নাম কি?

ফরজ নামাজের পর সকালের সালাতের নাম হচ্ছে ইশরাক নামাজ।

ইশরাকের নামাজ কতক্ষণ

ইশরাকের নামাজ সূর্য উদয়ের কমপক্ষে ১৫ মিনিট পর থেকে মাধ্যাহ্নিক পর্যন্ত থাকে।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *