জানাজার নামাজ [নিয়ম, দোয়া, নিয়ত]
জানাজার নামাজ ফরজে কেফায়া অর্থাৎ কোন গ্রাম বা গোত্র থেকে যদি কেউ মারা যায়, কিছু সংখ্যক লোক মিলে জানাজার নামাজ পড়ে ফেললে অন্যান্যদের আর পড়তে হবে না বা ফরজিয়াত সাকেত হয়ে যাবে। মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া আর মুসল্লিদের সওয়াব বর্ধন হয় জানাজার নামাজের মাধ্যমে।
জানাজার মধ্যে মানুষ যত বেশি হবে ততই ভালো আর মানুষ বেশি হওয়া মুস্তাহাব। জানাজার নামাজের অর্থ হচ্ছে মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করা এবং কাতার বেজুড় হওয়া উত্তম। তাই আজকে জানাজার নামাজের দোয়া এবং কিভাবে পড়বেন (জানাজার নামাজের নিয়ম) এই সমস্ত নিয়ম নীতি তুলে ধরব।
জানাজার নামাজ নিয়ে ইসলামে রয়েছে অনেক গুরুত্ব এবং ফজিলত। মৃত ব্যক্তিকে নিয়ে জীবিতদের উপর কাফন-দাপন, জানাজা ইত্যাদি হক এবং অবশ্যকীয় কাজ। কোন মানুষ মারা গেলে জীবিতদের উপর জানাযার নামাজ পড়া ফরজে কেফায়া।
যদি কিছু সংখ্যক লোক মৃত ব্যক্তির জানাজা পড়ে ফেলে বাকি লোকদের উপর ফরজিয়াত সাকেত বা দায়িত্বমুক্ত হয়ে যাবে। এলাকার সব মানুষের প্রতি জানাজার নামাজে অংশগ্রহণ করা সুন্নত, সেই সাথে তার পরিবার-পরিজনকে সান্ত্বনা দেওয়াও তাদের কর্তব্য।
জানাজার নামাজের নিয়ম
জানাজার নামাজের নিয়ম হলো প্রথমে মুসল্লিরা পশ্চিম দিকে দাঁড়াবে এবং মুসল্লিদের সামনে উত্তর-দক্ষিণ (মাতা উত্তর দিকে থাকবে) করে মৃত ব্যক্তিকে শোয়াবে। ইমাম মৃত ব্যক্তির সিনা বরাবর দাঁড়াবে তারপরে চার তকবিরের সাথে জানাজার নামাজ শেষ করবে।
প্রথমে তাকবীর বলে হাত বেঁধে ছানা পড়বে। অতঃপর তাকবীর বলে নবীজী (সা.) এর ওপর দরূদ পড়বে। এরপর তৃতীয় তাকবীর বলে নিজের জন্যে এবং মৃত ব্যক্তি ও সব মুসলমানদের জন্যে দোয়া করবে (বালেক, নাবালেকের ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা দোয়া যেগুলো নিচে দেয়া আছে)। অতঃপর চতুর্থ তাকবীর বলে সালাম ফিরাবে। প্রথম তাকবীর ছাড়া অন্য কোন তাকবীরে হাত উত্তোলন করবেনা।
উপরে আমি আপনাদের সাথে জানাজার নামাজ কিভাবে পড়তে হয়, এ বিষয় নিয়ে একটা ধারণা দেওয়ার কিংবা সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। নিচে স্টেপ বাই স্টেপ দেওয়া রয়েছে কিভাবে জানাজার যায় নামাজ পড়তে হয়।
ধাপ ১: প্রথমে জানাজার নামাজ পড়ার জন্য সবাইকে কাতার বন্ধি হতে হবে। ইমাম মৃত ব্যক্তির সিনা বরাবরে দাঁড়াবে। মাইয়্যাতকে অবশ্যই ইমামের সামনে রাখতে হবে এবং মুক্তাদি ইমামের পিছনে থাকবে।
ধাপ ২: কাতার বন্দি হয়ে সবাই দাঁড়িয়ে যাওয়ার পরে এখন জানাজার নামাজের নিয়ত করবে এবং ইমাম ইমামতির নিয়ত করবে। নিয়ত অবশ্যই মুখে উচ্চারণ করে করতে হবে না বরং মনে মনে জানাজার নামাজের নিয়ত করবে।
ধাপ ৩: নিয়ত করার পরে প্রথম তাকবীর বলবে, প্রথম তাকবীর বলে হাত বাঁধবে এবং জানাজার নামাজের ছানাটা পড়বে। জানাজার নামাজের ছানা নিচে দেওয়া হল:-
سُبْحَانَكَ اَللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَالَى جَدُّكَ وَجَلَّ ثَنَاءُكَ وَلاَ اِلَهَ غَيْرُكَ-
উচ্চারণ : সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবারাকাসমুকা, ওয়া তাআলা ঝাদ্দুকা ওয়া ঝাল্লা ছানাউকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা।
অর্থ : হে আল্লাহ! সকল প্রশংসা আপনার। আপনি সব ধরনের ত্রুটি-বিচ্যুতি হতে পবিত্র। আপনার নাম মঙ্গল ও বরকতপূর্ণ, আপনার মহত্ত্ব অতি বিরাট, আপনার প্রশংসা অতি মহত্ত্বপূর্ণ এবং একমাত্র আপনি ছাড়া আর কোনো প্রভু নেই।
ধাপ ৪: দ্বিতীয় তাকবীর বলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এর উপর দরুদ শরীফ পড়বে (হাত তুলবে না)। দরুদ শরীফ নিচে দেওয়া হল:-
اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى اَلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى اِبْرَا هِيْمَ وَعَلَى اَلِ اِبْرَ اهِيْمَ اِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ- اَللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى اَلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى اِبْرَا هِيْمَ وَعَلَى اَلِ اِبْرَا هِيْمَ اِنَّكَ حَمِيْدٌمَّجِيْدٌ
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা সাল্লিআলা মুহাম্মাদিঁ ওয়া আলা আলি মুম্মাদিন কামা সাল্লাইতা আলাইব্রাহীমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামিদুম্মাজীদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিঁ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা বারাকতা আলা ইব্রাহীমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহীমা ইন্নাকা হামীদুম্মাজীদ।
অর্থঃ যে আল্লাহ! মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং তাঁহার বংশধরগণের উপর ঐরূপ আশীর্বাদ অবতীর্ণ কর যেইরূপ আর্শীবাদ হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এবং তাঁহার বংশধরগণের উপর অবতীর্ণ করেছেন। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসা ভাজন এবংমহামহিম। হে আল্লাহ! মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং তাঁহার বংশধরগণের উপর সেইরূপ অনুগ্রহ কর যে রূপ অনুগ্রহ ইব্রাহীম (আঃ) এবং তাঁহার বংশরগণের উপর করেছিলেন। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসা ভাজন এবং মহামহিম।
ধাপ ৫: তৃতীয় তাকবীরের পর মায়্যিত এবং সমস্ত মুসলিম উম্মার জন্য জানাজার নামাজের দোয়া পড়বে (হাত তুলবে না)। এক্ষেত্রে নিম্নলিখিত দোয়াগুলো পড়বে:-
মায়্যিত বালেক নর-নারীর জন্য এই দোয়া পড়বে :
তৃতীয় তাকবীর পর জানাযার দু‘আ:
اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِحَيِّنَا وَمَيِّتِنَا، وَشَاهِدِنَا وَغَائِبِنَا. وَصَغِيْرِنَا وَكَبِيْرِنَا. وَذَكَرِنَا وَاُنْثَانَا اَللّٰهُمَّ مَنْ اَحْيَيْتَهٗ مِنَّا فَاَحْيِه عَلَى الْاِسْلَامِ. وَمَنْ تَوَفَّيْتَهٗ مِنَّا فَتَوَفَّهٗ عَلَى الْاِيْمَانِ
![জানাজার নামাজ [নিয়ম, দোয়া, নিয়ত] 1 জানাজার নামাজের দোয়া](https://namajerniyom.com/wp-content/uploads/2023/12/জানাজার-নামাজের-দোয়া.jpg)
অর্থ: হে আল্লাহ! তুমি ক্ষমা করো আমাদের জীবিতদেরকে, মৃতদেরকে, উপস্থিত ও অনুপস্থিতদেরকে, ছোট ও বড়দেরকে, পুরুষ ও নারীদেরকে। হে আল্লাহ! তুমি আমাদের মধ্যে যাকে জীবিত রাখো তাকে ইসলামের উপর জীবিত রাখ। যাকে মৃত্যু দান করো তাকে ঈমানের উপর মৃত্যু দান করো।
না বালেক নরের জন্য এই দোয়া পড়বে:
اللَّهُمَّ اجْعَلْهُ لَنَا فَرَطًاً , وَّاجْعَلْهُ لَنَا أَجْرًا وَّذُخْرًا , اَللَّهُمَّ اجْعَلْهُ لَنَا شَفِيْعًا وَّمُشَفَّعًا
না বালেক নরীর জন্য এই দোয়া পড়বে:
اللَّهُمَّ اجْعَلْهَا لَنَا فَرَطًاً , وَّاجْعَلْهَا لَنَا أَجْرًا وَّذُخْرًا , اَللَّهُمَّ اجْعَلْهَا لَنَا شَفِيْعَةً وَّمُشَفَّعَة
ধাপ ৬: চতুর্থ তাকবীর পর হাত না তুলে সালাম ফিরিয়ে ফেলবে।
উপরোক্ত নিয়ম অনুযায়ী একজন মৃত ব্যক্তির জানাজার নামাজ পড়া হয়ে থাকে। তাই আপনি যদি জানাজার নামাজের দোয়া এবং নিয়ম না জেনে থাকেন তাহলে উপরের স্টেপ গুলো ফলো করুন।
জানাযার নামাযের শর্ত কয়টি ও কি কি
জানাযার নামাযের শর্ত তিনটি।
- মাইয়্যিত উপস্থিত থাকা ।
- জানাযা মাটির উপর থাকা।
- জানাযা নামাযীর সামনে থাকা ।
জানাযার রুকন (ফরয) কয়টি ও কি কি
জানাজার ফরজ হল ২টি
- দাঁড়িয়ে নামায পড়া
- চার তাকবীর বলা
জানাযার নামাযের সুন্নত কয়টি ও কি কি?
জানাজার নামাযের সুন্নত তিনটি
- ছানা পড়া
- দুরূদ পড়া
- দু’আ পড়া
উপসংহারঃ আমি আশাবাদী আপনারা এ পর্যন্ত আর্টিকেলটি পড়ে জানাজার নামাজ সম্পর্কিত প্রায় বিস্তারিত জানতে পারলেন। তার পরেও যদি কোন কিছু জানতে অসুবিধা হয় আপনার মতামত কমেন্টে জানিয়ে দিবেন। উইকিপিডিয়াতে দেখুন।