তায়াম্মুমের নিয়ম [সময়, নিয়ম, ফরজ, সুন্নত]
ইসলামে অসুস্থ কিংবা অফারেগ ব্যক্তিদের জন্য জোরজবরদস্তি নেই। অসুস্থ ব্যক্তির জন্য রয়েছে অসুস্থ ব্যক্তির বিধান। যদি কোন ব্যক্তি পানি ব্যবহারে অফারেগ হয় তাহলে তার জন্য রয়েছে তায়াম্মুম এর বিধান। আজকে আমরা কথা বলব তায়াম্মুমের নিয়ম সম্পর্কে এবং কখন করা যাবে এ বিষয়টি নিয়ে।
সাধারণত আমরা দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হই কিংবা এমন জায়গাতে গিয়ে পৌঁছায় যেখানে পানি এভেইলেবল থাকে না। বা পানি থাকলেও স্বল্প পরিমাণ থাকে, যেগুলো দিয়ে যদি আমরা ওযু/গোসল করে ফেলি তাহলে পানি পান করার অভাব হবে।
তায়াম্মুম করার ক্ষেত্রে আপনি যদি তায়াম্মুমের ফরজ গুলি আদায় করলেই তাই এমন হয়ে যাবে। তবে এক্ষেত্রে কিছু নিয়ম কানুন রয়েছে যেগুলো মেনে চললে আরো সুন্দর এবং পরিপাটি হয়। তাহলে চলুন আমরা তায়াম্মুম এবং যাবতীয় বিষয় জেনে আসি।
তায়াম্মুম কি
অযু বা গোসলের জন্য পানি পাওয়া না গেলে কিংবা পানি ব্যবহারে অসুস্থ হওয়ার বা অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকলে তায়াম্মুম করার অনুমতি রয়েছে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
وَ اِنۡ کُنۡتُمۡ مَّرۡضٰۤی اَوۡ عَلٰی سَفَرٍ اَوۡ جَآءَ اَحَدٌ مِّنۡکُمۡ مِّنَ الۡغَآئِطِ اَوۡ لٰمَسۡتُمُ النِّسَآءَ فَلَمۡ تَجِدُوۡا مَآءً فَتَیَمَّمُوۡا صَعِیۡدًا طَیِّبًا فَامۡسَحُوۡا بِوُجُوۡهِکُمۡ وَ اَیۡدِیۡکُمۡ مِّنۡهُ ؕ مَا یُرِیۡدُ اللّٰهُ لِیَجۡعَلَ عَلَیۡکُمۡ مِّنۡ حَرَجٍ وَّ لٰکِنۡ یُّرِیۡدُ لِیُطَهِّرَکُمۡ وَ لِیُتِمَّ نِعۡمَتَهٗ عَلَیۡکُمۡ لَعَلَّکُمۡ تَشۡکُرُوۡنَ
আর তোমরা অসুস্থ হলে বা সফরে থাকলে, অথবা তোমাদের কেউ শৌচস্থান হতে আসলে কিংবা তোমরা স্ত্রীর সাথে মিলিত হলে অতঃপর পানি না পেলে পবিত্র ভূমিতে তায়াম্মুম করবে। (এটা এভাবে যে,) চেহারা ও হাতে তা থেকে মাসেহ করবে। আল্লাহ তাআলা তোমাদের উপর কষ্ট আরোপ করতে চান না, তিনি তোমাদের পবিত্র করতে চান এবং তোমাদের প্রতি তাঁর নিয়ামত পূর্ণ করতে চান, যাতে তোমরা শুকরিয়া জ্ঞাপন কর। (সূরা মায়েদা: ৬)
তায়াম্মুম কখন করা যাবে
নিম্নলিখিত দশটি কারণের থেকে কারো কাছে পাওয়া গেলে তায়াম্মুম জায়েজ হবে অন্যতায় হবে না।
- কোন মুসল্লী পানি ব্যবহারে সক্ষম না হলে।
- পানি তায়াম্মুম কারী ব্যক্তির থেকে শরঈ এক মাইল দূরে অবস্থিত হলে।
- ক্রোশ/শরঈ এক মাইল হল চার হাজার কদম।
- পানি ব্যবহারে সুস্থ ব্যক্তি অসুস্থ হয়ে যাওয়ার আশংকা থাকলে।
- পানি ব্যবহারে রুগ্ন ব্যক্তির রোগ নিরাময়ে দেরী হওয়ার আশংকা থাকলে।
- পানি ব্যবহারে রোগ বেড়ে যাওয়ার আশংকা হলে।
- কোথাও পানি আছে, তবে পানির জন্য যাওয়াতে শত্রুর ভয় হলে
- পানির জন্য যাওয়াতে হিংস্র প্রাণীর ভয় হলে।
- পানি ওযু/গোসলে ব্যবহার করে পিপাসার ভয় হলে।
- কুপের পানি আছে তবে বালতি বা রশি পাওয়া না গেলে। এমন ব্যক্তির জন্য উজু ও গোসলের পরিবর্তে তায়াম্মুম করা জায়েয।
তায়াম্মুমের নিয়ম
তায়াম্মুমের নিয়ত করে দুই হাত (খোলা অবস্থায়) মাটিতে চাপড় দিবে অতঃপর হাত ঝেড়ে মুখমণ্ডল এমনভাবে মাসেহ করবে যেন কোনো জায়গা স্পর্শহীন না থাকে। এরপর পুনরায় দুই হাত দিয়ে মাটিতে চাপড় দিবে এবং হাত ঝেড়ে বাম হাতের তর্জনী থেকে কনিষ্ঠা এই চার আঙ্গুলের ভিতরের অংশ ডান হাতের আঙ্গুলগুলির নিচে রেখে আঙ্গুলের মাথা থেকে কনুই পর্যন্ত টেনে নিয়ে আসবে।
তারপর বাম হাতের তালু ডান হাতের উপরে রেখে কনুই থেকে আঙ্গুলের মাথা পর্যন্ত টেনে নিয়ে যাবে। একই নিয়মে ডান হাত দিয়ে বাম হাতের আঙ্গুলের মাথা থেকে কনুই পর্যন্ত এবং কনুই থেকে আঙ্গুলের মাথা পর্যন্ত মাসেহ করবে।
এরপর দুই হাতের আঙ্গুল পরস্পরের মধ্যে ঢুকিয়ে খিলাল করবে। আংটি পরা থাকলে তার নিচেও আঙ্গুলের স্পর্শ লাগতে হবে। কেননা হাতের কোথাও চুল পরিমাণ জায়গা স্পর্শহীন থাকলে তায়াম্মুম দুরস্ত হবে না।
جَاءَ رَجُلٌ فَقَالَ : أَصَابَتْنِي جَنَابَةٌ، وَإِنِّي تَمَعَكُتُ فِي التَّرَابِ فَقَالَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : اِضْرِبُ، فَضَرَبَ بيديه الارض فَمَسَحَ وَجْهَهُ ثُمَّ ضَرَبَ بِيَدَيْهِ، فَمَسَحَ بِهِمَا يَدَيْهِ إِلَى الْمِرفقين (بيهقي : باب كيفالتيمم وقال : إسناده صحيح)
এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বলল, আমার গোসল ফরয হয়েছিল। (কিন্তু পানি না থাকায় আমি) মাটিতে গড়াগড়ি করেছি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “এভাবে হাত দিয়ে চাপড় দাও এবং নিজেই দুই হাত দিয়ে ভূমিতে চাপড় দিলেন ও চেহারা মাসেহ করলেন। পুনরায় দুই হাত দিয়ে চাপড় দিলেন এবং দুই হাত কনুই পর্যন্ত মাসেহ করলেন।” (সুনানে বায়হাকী: ১/২০৭)
তায়াম্মুমের ফরজ কয়টি
তায়াম্মুমের ফরজ ৩টি
- নিয়ত করা।
- উভয় হাত জমিনের উপরে মেরে একবার সমস্ত মুখমন্ডল মাসেহ করা।
- পুনরায় জমিনে হাত মেরে উভয় হাত কনুই পর্যন্ত মাসেহ করা।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ মুখমন্ডল বা হস্তদ্বয়ের নখ পরিমাণ অংশ যদি মাসেহ করা না হয় তাহলে তায়াম্মুম হবে না। তাই হাতের আংটি ও চুড়ি নাড়া চাড়া করে নিতে হবে ও আঙ্গুল খেলাল করতে হবে।
তায়াম্মুমের সুন্নত কয়টি
তায়াম্মুমের সুন্নত ৮টি
- উভয় হাতের তালু জমিনের উপরে মারা
- উভয় হাতকে সামনের দিকে নিয়ে যাওয়া।
- উভয় হাতকে টেনে পেছনের দিকে আনা।
- উভয় হাত ঝাড়া দেয়া।
- উভয় হাতের আঙ্গুলকে ফাঁকা রাখা।
- বিসমিল্লাহ বলা
- তারতীব অনুযায়ী মাসেহ করা।
- একের পর এক লাগাতার মাসেহ করা।
কোন কোন বস্তু দ্বারা তায়াম্মুম করা যায়
মাটি, বালি, চুনা, লাল পাথর, কালো পাথর, সাদা মর্মর পাথর ইত্যাদি মাটি জাতীয় সব জিনিসের উপর তায়াম্মুম করা জায়েয আছে। তবে তা অবশ্যই পাক হতে হবে।
নামাযের সময় আরম্ভ হওয়ার আগে তায়াম্মুম করা ও তদ্বারা একাধিক ফরয ও নফল নামায আদায় করা জায়েয হবে কি?
নামাযের সময় আরম্ভ হওয়ার আগে তায়াম্মুম করা ও তদ্বারা একাধিক ফরয ও নফল নামায পড়া জায়েয আছে।
তায়াম্মুম কখন বাতিল হবে?
পানি ব্যবহারে সক্ষম হলে তার তায়াম্মুম ভঙ্গ হয়ে যাবে। এমনকি নামাযরত অবস্থায়ও যদি পানি ব্যবহারে সক্ষম হয়ে যায় তাহলেও নামায ভঙ্গ হয়ে যাবে।
মুসল্লীর শরীর বা পোশাক যদি নাপাক হয়ে যায় এবং পাক পানি ব্যবহারে সক্ষম না হয় তাহলে তার হুকুম কি?
মুসল্লীর শরীর বা পোশাক নাপাক হয়ে গেলে এবং পাক পানি ব্যবহারে সক্ষম না হলে সে ব্যক্তির জন্য নাপাকী নিয়ে নামায পড়া জায়েয আছে। তবে শর্ত হল ছতর ঢাকার মত পাক কাপড় না থাকতে হবে।