তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম [নিয়ত, সময়, রাকাত]
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত, নিয়ত ও রাকাত সংখ্যা সম্পর্কে জানা প্রত্যেক তাহাজ্জুদ গুজারী মুসলিমদের দরকার। কেননা আপনি সঠিক নিয়ম উনি অতি ইত্যাদি না জানেন তাহলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে গোলমাল হয়ে যাবে। তার জন্য আজকের এই নিবন্ধে এই রিলেটেড সবগুলো বলা হয়েছে। ইস্তেখারা নামাজের নিয়ম সম্পর্কে জেনে আসুন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমরা তাহাজ্জুদের নামাযকে আকড়ে ধরো, কেননা, তা তোমাদের পূর্ববর্তী বুযুর্গদের সিফাত, তোমাদের পালনকর্তার নৈকট্য লাভের মাধ্যম, পাপসমূহ মোচনকারী এবং গুনাহ থেকে বাঁধাদানকারী। (সুনানে তিরমিযী, হাদীস: ৩৬১৯)
আরও বিস্তারিত জানুন
তাহাজ্জুদের নামায ২ রাকাত, ৪ রাকাত, ৬ রাকাত, ৮ রাকাত বা এর বেশিও পড়া যায়। তাহাজ্জুদের সময় হল ইশার নামাযের পর থেকে সুবহে সাদিকের পূর্ব পর্যন্ত। তবে, রাতের শেষ-তৃতীয়াংশে পড়া উত্তম। তাহাজ্জুদ নামাজের সংক্ষিপ্ত আলোচনা যেগুলো জানা দরকার নিচে দেয়া হল:
- ঈশার নামাযের পর থেকে সুবহে সাদিকের পূর্ব পর্যন্ত যে নফল নামায পড়া হয় তাকে ‘সালাতুল লাইল’ বা ‘তাহাজ্জুদের নামায’ বলা হয়। নফল নামাযের মধ্যে এই প্রকার নফল অর্থাৎ, তাহাজ্জুদের ফযীলত সবচেয়ে অধিক।
- ঈশার নামাযের পর থেকে সুহে সদিকের পূর্ব পর্যন্ত তাহাজ্জুদের সময়। তবে শেষ রাতে তাহাজ্জুদের নামায পড়া উত্তম।
- তাহাজ্জুদের নামায ২ থেকে ১২ রাকাত। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাধারণতঃ ৮ রাকাত পড়তেন বিধায় এটাকেই উত্তম বলা হয়েছে। পারলে ৮ রাকআত নতুবা ৪ রাকআত, আর তাও হিম্মত না হলে ২ রাকআত হলেও পড়বে।
- তাহাজ্জুদের নামাযের কাযা নেই, তবে রাতে পড়তে না পারলে পরের দিন দুপুরের পূর্বে অনুরূপ পরিমাণ নফল পড়ে নেয়া উত্তম (ফতোয়ায়ে দারুল উলুম)।
- তাহাজ্জুদের নামায যে কোন সূরা দিয়ে পাঠ করা যায়, তবে কিরাত লম্বা হওয়া উত্তম।
উপরোক্ত লিস্ট থেকে আপনারা tahajjud namaz সম্পর্কিত সাধারণত যে বিষয়গুলো জানা দরকার সেগুলো জানতে পারবেন। এখন আমি রাতের নামাজ বা কিয়ামুল লাইল সম্পর্কে আরো বিস্তারিত আলোচনা করব।
আরো পড়ুন: ফজরের নামাজ [নিয়ম, নিয়ত, সময়, রাকাত]
তাহাজ্জুদ নামাজ
ইশার নামাযের পর কিছু সময় ঘুমিয়ে শেষ রাতে যে নামায পড়া হয়, তা তাহাজ্জুদ নামায। এ নামায আট রাকাআত বা যে পরিমাণ সম্ভব হয় পড়া যায়। কুরআন-সুন্নাহতে এ নামাযের অনেক ফযীলত ও ছওয়াবের কথা এসেছে। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-
وَ عِبَادُ الرَّحۡمٰنِ الَّذِیۡنَ یَمۡشُوۡنَ عَلَی الۡاَرۡضِ هَوۡنًا وَّ اِذَا خَاطَبَهُمُ الۡجٰهِلُوۡنَ قَالُوۡا سَلٰمًا . وَ الَّذِیۡنَ یَبِیۡتُوۡنَ لِرَبِّهِمۡ سُجَّدًا وَّ قِیَامًا
অর্থ: ‘রহমান’-এর বান্দা তারাই যারা ভূমিতে নম্রভাবে চলে এবং যখন মূর্খ লোকেরা তাদেরকে সম্বোধন করে তখন তারা বলে, ‘সালাম‘। আর তারা রাত্রি অতিবাহিত করে তাদের প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সিজদাবনত হয়ে ও দণ্ডায়মান থেকে। (সূরা ফুরকান: ৬৩)
হযরত আবু উমামা বাহিলী (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
،عليكم بقيام الليل، فانه دأب الصالحين قبلكم، وهو قربة لكم الى ربكم ومكفره للسيئات ومنهاة للاثم
তোমরা কিয়ামুল লায়ল (তাহাজ্জুদের) বিষয়ে যত্নবান হও। কেননা, তা ছিল তোমাদের পূর্ববর্তী পুণ্যবান মানুষের অভ্যাস। আর তা হচ্ছে তোমাদের পালনকর্তার নৈকট্য লাভের উপায়, গুনাহ মোচনকারী এবং মন্দ কাজ থেকে নিবৃত্তকারী।’ (বায়হাকী: ২/৫০২)
উন্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত-
ان نبي الله كان يقوم من الليل حتى تتفطر قدماه. فقالت عائشة: لم تصنع هذا يا رسول الله صلى الله عليه وسلم وقد غفر الله لك ما تقدم وما تأخر؟ قال أفلا أحب أن أكون عبدا شكورا
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে এত দীর্ঘ সময় নামাযে দণ্ডায়মান থাকতেন যে, তার কদম মোবারক ফুলে যেত। এ অবস্থা দেখে উন্মুল মুমিনীন বললেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! এত পরিশ্রম আপনি কেন করছেন অথচ আল্লাহ আপনার বিগত-আগত সকল কিছুই ক্ষমা করে দিয়েছেন?’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তবে কি আমি কৃতজ্ঞ বান্দা হওয়া পছন্দ করব না’?” (সহীহ বুখারী: ২/৭১৬)
তাহাজ্জুদ নামাজ কি?
তাহাজ্জুদ নামাজের আভিধানিক অর্থ হলো রাত জাগরণ। শরীয়তের পরিভাষায়, রাতের শেষ তৃতীয়াংশে রাত জেগে বা রাতে তাহাজ্জুদের নিয়তে যে সুন্নত/নফল নামাজ পড়া হয় থাকেই তাহাজ্জুদের নামাজ বলে। এটা মুসলমান, ঈমানদারদের জন্য ঐচ্ছিক একটি ইবাদত তথা পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের মত বাধ্যতামূলক নয়।
তাহাজ্জুদ নামাজের সময় হলো রাতের শেষ তৃতীয়াংশ তথা এটিই তাহাজ্জুদের জন্য উত্তম সময়। তবে ঘুম থেকে না জাগার সম্ভাবনা থাকলে ইশার নামাজের পর বিতরের আগে তা পড়ে নেয়া জায়েজ আছে।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম
তাহাজ্জুদের নামাজে মূলত তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত করে দুই রাকাত, চার রাকাত, আট রাকাত কিংবা ১২ রাকাত পর্যন্ত পড়া যায় (চাইলে এর বেশিও করা যাবে)। যেহেতু রাসূল সাঃ ৮ রাকাত পড়তেন তাই এটাই উত্তম (আপনি চাইলে এর বেশি বা কমও পড়তে পারেন, তবে সর্বনিম্ন দুই রাকাত) । নিয়ম:
- নামাজের সমস্ত শর্ত-শরায়েত পূরণ করে নামাজের জন্য দাঁড়াতে হবে
- তারপর তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত করতে হবে
- এরপর ছানা পড়ুন
- আউজুবিল্লাহ-বিসমিল্লাহ পড়ে সুরা ফাতেহা পড়ুন
- এখন বিসমিল্লাহ পড়ে কেরাত পড়ুন
- তারপর রুকুতে গিয়ে অন্যান্য নামাজের মত নামাজ শেষ করুন (অবশ্যই যত রাকাতের নিয়ত করেছেন তা শেষ করতে হবে)
উপরোক্ত নিয়ম অনুযায়ী নামাজ শেষ করবেন। তবে অবশ্যই নামাজের প্রতি মনোযোগী হতে হবে এবং একান্তভাবে নামাজ আদায় করতে হবে। যেহেতু নবী করীম সাঃ কেরাত লম্বা পড়তেন তাই লম্বা পড়াই উত্তম।
তাহাজ্জুদ নামাযের নিয়ত
আসলে নিয়ত অর্থ মনের সংকল্প বা দিলের ইচ্ছে। এটি থেকে প্রতিীয়মান হয় যে, আপনি যে তাহাজ্জুতের নামাজ পড়তেছেন, এটি একটা মনে মনে সংকল্প করবেন। সেই সাথে কত রাকাত পড়বেন, তাও নির্ধারণ করবেন।
![তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম [নিয়ত, সময়, রাকাত] 1 তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত বাংলা, আরবি](https://namajerniyom.com/wp-content/uploads/2024/03/তাহাজ্জুদ-নামাজের-নিয়ত.png)
তাহাজ্জুদ নামাজের বাংলা নিয়ত
তাহাজ্জুদ নামাজের বাংলা নিয়ত ” আমি কেবলা মুখি হয়ে দুই রাকাত তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করতেছি” এইভাবেই করলে হয়ে যাবে। তবে এখানে দুই এর জায়গায় আপনি যত রাকাত পড়বেন এটা নির্ধারণ করবেন।
তাহাজ্জুদ নামাজের আরবি নিয়ত
আরবিতে যেকোনো নামাজের নিয়ত করা গুরুত্বপূর্ণ নয়। এমনকি আপনি যদি আরবির অর্থটা না জানেন তাহলে আরবিতে নিয়ত না করাই ভালো। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই বাংলায় নিয়ত করবেন যেটা উপর বলা আছে। আরবিতে নিয়ত ”نَوَيْتُ أَنْ أُصَلِّي رَكْعَتَى التَّهَجُدِ ” এইভাবে করবেন। যার অর্থ “আমি তাহাজ্জুদের দুই রাকাত নামায পড়ার নিয়ত করলাম”
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত আরবিতে বাংলা উচ্চারণ
নাওয়াইতু আন অুসাল্লি রাক্’আতাই তাহাজ্জুদি
তাহাজ্জুদ নামাযের সময়
দোয়া ও তাহাজ্জুদ নামাজের সর্বোত্তম সময় হল রাতের শেষ তৃতীয়াংশ। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত-
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ قَالَ يَنْزِلُ رَبُّنَا تَبَارَكَ وَتَعَالَى كُلَّ لَيْلَةٍ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا حِينَ يَبْقَى ثُلُثُ اللَّيْلِ الآخِرُ فَيَقُولُ مَنْ يَدْعُونِى فَأَسْتَجِيبَ لَهُ وَمَنْ يَسْأَلُنِى فَأُعْطِيَهُ وَمَنْ يَسْتَغْفِرُنِى فَأَغْفِرَ لَهُ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “আমাদের পরওয়ার-দেগার প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশে দুনিয়ার আসমানে অবতীর্ণ হন এবং বলেন,’কোনো দুআকারী আছে কি? আমি তার দুআ কবুল করব। কোনো প্রার্থনাকারীআছে কি? আমি তার প্রার্থিত বস্তু দান করব। কোনো ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছে কি? আমি তাকে ক্ষমা করব’।” (তিরমিযী শরীফের বর্ণনায় একথাও আছে যে, এই আহ্বান সুবহে সাদিক পর্যন্ত চলতে থাকে।) (সহীহ বুখারী: ১/১৫৩)
তাহাজ্জুদ নামাজের রাকাত সংখ্যা
উন্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত:
ما كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يزيد في رمضان ولا في غيره على إحدى عشرة ركعة يصلي اربعا، فلا تسأل عن حسنهن وطولهن، ثم يصلي اربعا، فلا تسأل عن حسنهن وطولهن ثم يصلي ثلاثا
‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানে ও রমযানের বাইরে বারো রাকাআতের বেশি পড়তেন না। চার রাকাআত নামায পড়তেন, যার দীর্ঘতা ও সৌন্দর্য সম্পর্কে কী বলব! এরপর চার রাকাআত পড়তেন, যার দীর্ঘতা ও সৌন্দর্য ভাষায় প্রকাশ করা যায় না! এরপর তিন রাকাআত পড়তেন।’ (সহীহ মুসলিম: ১/২৫৪)
তাহাজ্জুদ নামায চার থেকে ১২ রাকাআত পড়া যায়। যার পক্ষে যত রাকাআত সম্ভব পড়বে। শেষরাত্রে উঠতে পারবে-এই আত্মবিশ্বাস যাদের রয়েছে তারা বিতর শেষরাতে পড়বে। অন্যরা ইশার নামাযের পরই বিতর পড়বে।