বেতের নামাজের নিয়ম, সূরা ও নিয়ত

বিতর নামাজ অন্যান্য নামাজ থেকে একটু ডিফরেন্ট হওয়ায় অনেক সময় কিছু বিষয় নিয়ে আমরা দ্বিধা দ্বন্দ্বে পরি। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই ইমাম সাহেব কিংবা বিজ্ঞ মানুষের শরণাপন্ন হওয়াটাই উত্তম। তাছাড়া সময়ের ও তো একটি বিষয় রয়েছে তাই না?

যার ফলে পরিলক্ষিত করা যায় আপনারা অনেকেই গুগলে বিতর নামাজের নিয়ম, নিয়ত ও কিভাবে আদায় করতে হয় সে সম্পর্কে সার্চ করে থাকেন।

যদি তাই হয় আশা করি বিতর সম্পর্কিত আমাদের আজকের আয়োজনটির পর আপনাকে আর কোন দ্বিধায় পড়তে হবে না।‌ কারণ আজ আমরা ক্লিয়ার করে দিতে যাচ্ছি বিতর নামাজের নিয়ত ও নিয়ম-কানুনের ব্যাপারে ইনশাআল্লাহ।

বেতের নামাজ

বিতর, Witr, الوتر আরবি শব্দ যার বাংলা অর্থ বিজোড়। صلاة الوتر বিজোড়ের নামাজ তথা বিতর নামাজ কে বোঝানো হয়। যা প্রত্যেক মুসলিম বালেগ বালিগা নর-নারীর ওপর প্রতিদিন এশার নামাজের পর থেকে ফজরের পূর্বক্ষণ পর্যন্ত আদায় করা ওয়াজিব।

কেননা রাসূলে আরাবি সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম হাদিসে পাকের মধ্যে এরশাদ করেন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বিজোড় এবং তিনি বিজোড় নামাজকে পছন্দ করেন। অতএব তোমরা বিজোড় সালাত (বিতর সালাত) আদায় কর। তিরমিজি

বিতর নামাজের নিয়ত

নিয়ত মানে মনের সংকল্প। প্রায় সকলেই নিয়ত সম্পর্কে যে ভুলটি করে থাকি সেটি হল। নিয়তের ক্ষেত্রে আমরা আরবি নিয়ত কে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকি। মূলত বিষয়টি এরকম নয় নিয়ত নিজ মাতৃভাষায় করাটা অনেক ক্ষেত্রে আরবি থেকে উত্তম।

কেননা আরবি গ্রামারের পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান আমাদের না থাকায় নিয়তের মধ্যে অনেক ভুল করে থাকি। কিন্তু দেখুন নিজ ভাষায় যখন নিয়ত করবেন তা হওয়ার সম্ভাবনা নেই।যাই হোক আমরা আপনাদের সাথে বিতর নামাজের আরবি এবং বাংলা উভয় নিয়তই শেয়ার করব।

বিতর নামাজের বাংলা নিয়ত: ভিতর নামাজের নিয়ত ফরজ নামাজের ন্যায় ৩ ভাবে হতে পারে (একাকী, জামাত বন্দী হয়ে এবং নিজে ইমাম হলে)। তাই এই ভিন্ন পরিস্থিতিতে আপনাকে ভিন্নভাবে নিয়ত বাঁধতে হবে।

  • ইমাম হয়ে নামাজ পড়ালে: নিয়তের ধরন হবে কিছুটা এরকম ’’কেবলামুখী হয়ে ৩ রাকাত বিতর নামাজ পড়াচ্ছি।’’
  • ইমামের পিছনে নামাজ পড়লে: ’’আমি কেবলামুখী হয়ে ইমামের পিছনে ৩ রাকাত বিতর নামাজ আদায় করছি করছি।’’
  • একাকী হলে: তখন নিয়ত টি হবে কিছুটা এরকম ’’আমি কেবলামুখী হয়ে ৩ রাকাত বিতর নামাজ আদায় করছি করছি।’’

বেতের নামাজের আরবি নিয়ত: নাওয়াইতুয়ান য়া ওসল্লিয়া লিল্লাহি তা’আলা সালাসা রাকায়াতি সালাতিল ওয়িতরি ওয়াজিবুল্লাহি তায়ালা মুতাওয়াজ্জিহানইইলাজিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি আল্লাহু আকবার।

বেতের নামাজের নিয়ম

বেতের নামাজ পড়ার জন্য সময় আসার পর বেতেরের নিয়ত বাঁধুন, তারপর অন্যান্য নামাজের মত তৃতীয় রাকাতে সুরা ফাতেহা এবং কেরাত পড়ার পরে উল্টা তাকবীর বেঁধে দোয়ায়ে কুনুত পড়ুন এবং তৃতীয় রাকাত পড়ে অন্যান্য নামাজের মত নামাজ শেষ করুন।

বেতরের নামাজ ৩ রাকাত। তাই তৃতীয় রাকাত পড়ার পর আর দাঁড়াবেন না, বরং অন্যার ফরজ, সুন্নত নামাজের মত শেষ বৈঠক করে নামাজ শেষ করুন। প্রত্যেকটা বিষয় নিচে স্টেপ বাই স্টেপ দেওয়া হল:-

  1. ফরজ এবং সুন্নত আদায় করে জায়নামাজে দাঁড়িয়ে পড়ুন।
  2. উপরে উল্লেখিত নিয়মে বাংলায় কিংবা আরবিতে নিয়ত করুন।
  3. তাকবিরে তাহারিমা অর্থাৎ আল্লাহু আকবার বলে হাত হাত বাঁধন।
  4. সানা, আউযুবিল্লাহ বিসমিল্লাহ সহিত সুরা ফাতেহা এবং একটি সূরা মিলান।
  5. অতঃপর রুকু সিজদা গুলো অন্যান্য নামাজের ন্যায় কন্টিনিউ করুন।
  6. অতপর দাঁড়িয়ে আগের নেই সুরা ফাতেহা এবং অন্য একটি সূরা মিলান।
  7. আবারো রুকু সিজদা গুলো অন্যান্যের ন্যায় আদায় করে এবার বসে পড়ুন।
  8. এটা আপনার প্রথম বৈঠক। প্রথম বৈঠকে শুধু তাশাহুদ পড়ুন।
  9. পুনরায় তাশাহুদ শেষ করে দাঁড়িয়ে পড়ুন।
  10. বিসমিল্লাহ এর সাথে সূরা ফাতিহা এবং অন্য একটি সূরা পড়ুন। এবং পুনরায় আবার আল্লাহু আকবার বলে হাত কান পর্যন্ত উঠে হাত বেঁধে ফেলুন।
  11. এবার দোয়ায়ে কুনুত পড়ুন। (দোয়ায়ে কুনুত শিখতে ক্লিক করুন।)
  12. এবার আল্লাহ আখবার বলে রুকু করুন এবং রুকুর তাসবিহ পড়ে সামি আল্লাহুলিমান হামিদা বলে দাঁড়িয়ে রাব্বানা লাকাল হামদ বলুন।
  13. অন্যান্য নামাজের নেই আল্লাহু আকবার বলে দুই সেজদা আদায় করে বসে পড়ুন।
  14. এবং এটাই আপনার (আখেরি) শেষ বৈঠক।
  15. বসে তাশাহুদ, দরুদ শরীফ, দোয়ায়ে মাসুরা, পড়ুন।
  16. সবশেষে আসসালামুয়ালাইকুম ও রাহমাতুল্লাহ বলে ডানে বামে সালাম ফিরিয়ে নিন।

নিচে কিছু এই নামাজ সম্পর্কে বহুল প্রচলিত প্রশ্ন উত্তর দেওয়া হলো। তবে আমার রিকমেন্ড থাকবে, নিজের প্রশ্নগুলো জানার আগে বা পড়ার আগে আপনার উচিত বিতর নামাজ সম্পর্কে জানা।

বিতর নামাজে দোয়া কুনুত কখন পড়তে হয়?

দুই রাকাত নামাজ আদায় করে দাঁড়িয়ে সুরা ফাতিহা এবং অন্য একটি সূরা মিলিয়ে পুনরায় আল্লাহু আকবার বলে হাত বেঁধে দোয়ায়ে কুনুত পড়তে হয়।

দোয়া কুনুত না পারলে কি পড়তে হবে?

মাসআলা হল যদি কেউ দোয়ায়ে কুনুত না জানে সেক্ষেত্রে অতি দ্রুত শিখে ফেলবে। এবং ওই সময়টায় রাব্বানা জালামনা আনফুসানা ওয়া ইলামতাগফিরলানা ওয়াতারহাম নালানা কুনান্না মিনাল খসিরিন অথবা চাইলে যে কোন দোয়া পড়ে নেবে।

বেতের নামাজ কয় রাকাত?

বেতের নামাজ কয় রাকাত তা নিয়ে মত অনৈক্য রয়েছে ইমাম আবু হানিফা রাহমাতুল্লাহি আলাইহির মতে বেতের নামাজ ৩ রাকাত আদায় করবে।

বিতর কোন সূরা পড়তে হয়?

বিতর নামাজের জন্য নির্দিষ্ট কোনো সূরা নেই, বরং আপনি কোরআনের যে কোন সূরা থেকে অন্যান্য নামাজের মত পড়তে পারবেন।

শেষ কথা: আমরা যথার্থ চেষ্টা করেছি বিতর নামাজের নিয়ত ও নিয়ম-কানুন সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ একটি আর্টিকেল আপনাদের সাথে শেয়ার করার। আশা করি আজকের আর্টিকেলটি আপনাকে শুদ্ধভাবে বিতর নামাজ আদায় করতে সাহায্য করবে।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *