শবে বরাতের ফজিলত ও হাদিস সম্পর্কে বিস্তারিত ২০২৪

শবে বরাত, মুসলমানদের কাছে একটি বিশেষ ও মর্যাদাপূর্ণ রাত। আরবি শাবান মাসের পঞ্চদশ রাতে পালিত এই রাতকে ‘মধ্য-শা’বান’ ও ‘লাইলাতুল বরাত’ও বলা হয়। উপমহাদেশে, শবে বরাত ‘সৌভাগ্য রজনী’ হিসেবেও পরিচিত।

এই রাতের তাৎপর্য অপরিসীম। মুসলমানদের ধারণা, এই রাতে পরবর্তী বছরের ভাগ্য লিপিবদ্ধ হয়। সারা রাত জেগে ইবাদত-বন্দেগি এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলে গুনাহ মাফ হয় বলে আশা করা হয়।

তাই আজকে আমি চিন্তা করেছি, আপনাদের সাথে শবে বরাত সম্পর্কে বিস্তারিত শেয়ার করতে। এই নিবন্ধটিতে বলা হবে শবে বরাত কি? আমল করনীয় বর্জনীয় সম্পর্কে বিস্তারিত। তাই জানতে চাইলে পড়ুন আজকের এই নিবন্ধটি শেষ পর্যন্ত।

শবে বরাত কি?

শবে বরাত কি

‘বরাত’ শব্দের অর্থ মুক্তি এবং ‘শব’-এর অর্থ রাত। অতএব ‘শবে বরাত-এর অর্থ মুক্তির রাত। এই রাতে আল্লাহ তা’আলা অভাব-অনটন, রোগ-শোক ও বিপদ-আপদ থেকে মুক্তি চাওয়ার জন্য মানুষকে আহ্বান জানান এবং তাঁর নিকট চাইলে তিনি এসব থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন, তাই এ রাতকে শবে বরাত বা মুক্তির রাত বলা হয়। শাবান মাসের ১৫ই রাত অর্থাৎ, ১৪ই শাবান দিবাগত রাতই হল এই শবে বরাত।

শবে বরাত সম্পর্কে হাদিস

লাইলাতুল বরাত বা শবে বরাত এর বিভিন্ন আমল এবং এ বিষয়টি বিশুদ্ধ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। এই রাতে নির্দিষ্ট কোন রূপ যেমন হালুয়া-রুটি ইত্যাদি না করে বিভিন্ন ইবাদত বন্দেগীতে মনোযোগ দেয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

আর আমাদের সমাজে যে হালুয়া-রুটি ইত্যাদির আয়োজন করা হয় এগুলো সম্পূর্ণ বিদআত, যা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। আজকের এই সেকশনে শবে বরাত সম্পর্কে কিছু হাদিস দেয়া হল:

১/ হযরত মু‘আয ইবনে জাবাল রাযি. বলেন. নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন আল্লাহ তা‘আলা ১৫ই শা‘বানের রাতে সৃষ্টির দিকে রহমতের দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত আর সবাইকে ক্ষমা করে দেন। (সহীহ ইবনে হিব্বান-৫৬৬৫, সিলসিলাতুল আহাদীছিস সহীহাহ-৩/৩১৫)

২/ হযরত আ‘লা ইবনুল হারেস থেকে বর্ণিত, হযরত আয়েশা রাযি. বলেন, রাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামাযে দাঁড়ান এবং এত দীর্ঘ সিজদা করেন যে, আমার ধারণা হলো তিনি হয়তো মৃত্যুবরণ করেছেন, আমি তখন উঠে তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলী নাড়া দিলাম, তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলী নড়ল। যখন তিনি সিজদা থেকে উঠলেন এবং নামায শেষ করলেন, তখন আমাকে লক্ষ করে বললেন, হে আয়েশা/হুমাইরা! তোমার কি এ আশংকা হয়েছে যে, আল্লাহর রাসূল তোমার হক নষ্ট করবেন? আমি উত্তরে বললাম, না; ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনার দীর্ঘ সিজদা থেকে আমার আশংকা হয়েছিল, আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন কিনা? নবীজী জিজ্ঞাসা করলেন. তুমি কি জানো এটা কোন রাত? আমি বললাম. আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভাল জানেন। রাসূল তখন ইরশাদ করলেন, এটা অর্ধ শা‘বানের রাত। আল্লাহ তা‘আলা এ রাতে বান্দার প্রতি মনোযোগ দেন এবং ক্ষমাপ্রার্থীদের ক্ষমা করেন ও অনুগ্রহপ্রার্থীদের অনুগ্রহ করেন। আর বিদ্বেষপোষণকারীদের ছেড়ে দেন তাদের অবস্থাতেই। (শু‘আবুল ঈমান-হাদীস নং- ৩৬৩৫)

৩/ শবে বরাত সম্পর্কে হাদীসে আছে- একদা হযরত আয়েশা রাযি. হুযুর সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে না পেয়ে খুঁজতে বের হলেন। তাকে জান্নাতুল বাকীতে পেলেন- তখন হুযুর সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন ১৪ই শা‘বান দিবাগত রাতে আল্লাহ তা‘আলা প্রথম আকাশে অবতরণ করেন এবং ‘বনূ কালব’ গোত্রের পালিত ছাগল পালের শরীরের পশমের চেয়েও অধিক সংখ্যক বান্দাকে তিনি ক্ষমা করে দেন। (তিরমিযী শরীফ-হাঃ নং ৭৩৯, ইবনে মাযাহ- হাঃ নং ১৩৮৫)

৪/ হযরত আলী ইবনে আবী তালেব রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন অর্ধ শা‘বানের রাত যখন আসে তখন তোমরা এ রাত্রি ইবাদত বন্দেগীতে কাটাও এবং দিনের বেলা রোযা রাখ। কেননা এ রাতের সূর্যাস্তের পর আল্লাহ তা‘আলা প্রথম আসমানে আসেন এবং বলেন, কোন ক্ষমা প্রার্থী আছে কি? আমি তাকে ক্ষমা করব। আছে কি কোন রিযিক প্রার্থী? আমি তাকে রিযিক দিব। এভাবে সুবহে সাদিক পর্যন্ত আল্লাহ তা‘আলা মানুষের প্রয়োজনের কথা বলে তাকে ডাকতে থাকেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ-১৩৮৪, শু’আবুল ঈমান-৩৮২৩-২২)

বিঃদ্রঃ উপরোক্ত হাদিসগুলো আমরা কালেক্ট করেছি ইসলামী জিন্দেগি নামক অ্যাপস থেকে। দৈনন্দিন জীবনে এই অ্যাপটি আমাদের ইসলামিক জীবনকে সহজ করে দিয়েছে। তাই আপনারা চাইলে ইসলামিক জিন্দেগী এপটি ইন্সটল করতে পারেন।

শবে বরাতের ফজিলত

আমাদের সমাজে দেখা যায় যে, যখন শবে বরাত আসে তখন দুই দলের মধ্যে অনেক মতানৈক্য বা পার্থক্য দেখা দেয়। একদল অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করে শবে বরাতের দিন আতশবাজি, পটকা-বাজি এবং হালুয়া রুটি ইত্যাদি করে। আবার আরেক দল মনে করে যে শবে বরাত সম্পূর্ণরূপে বিদআত।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে শবে বরাতের ফজিলত কি নেই? বা এমন আমাদেরকে হালুয়া-রুটি ইত্যাদি করতে হবে? তাই আমরা যারা সাধারণ মুসলিম আছি, তাদেরকে বাড়াবাড়ির মধ্যে না গিয়ে, যা হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করেছেন এর বাইরে কিছু করবোনা।

আজকে মূলত আমরা লাইলাতুল বরাতের কিছু ফজিলত নিয়ে এই সেকশনে আলোচনা করব। এগুলো আমি বিভিন্ন আলেমের ওয়াজ & কিতাব থেকে সংগ্রহ করেছি। তাই আশা করি আপনাদের উপকারে আসবে। আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে আমি নিচে একটা ভিডিও দিয়ে দিয়েছি সেটা দেখলে আপনি বিস্তারিত জেনে যাবেন।

শবে বরাতের অন্যতম ফজিলত হচ্ছে – আমরা সাধারণত সারাটি বছর আল্লাহ তাআলার দরজা নক করি যেন আমাদেরকে আল্লাহ তায়ালা মাফ করেন। কিন্তু শবে বরাতের দিন আল্লাহ নিজেই আমাদেরকে নক করেন আমাদের গুনাহ গুলো মাফ করার জন্য। তথা শবে বরাতের দিন আল্লাহ তায়ালা বান্দার গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেন।

উপরের লিখিত যে ফজিলতটি আছে সেটাও একটা দুর্বল হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। তারপরেও শবে বরাত সম্পর্কে এই হাদিসটি, যেহেতু অনেক সাহাবী বর্ণনা করেছেন তাই এটা দুর্বল হলেও এর উপর আমল করা যাবে।

অন্যান্য হাদিস থেকে এটাও জানা যায় যে, আল্লাহ তায়ালা সমস্ত বান্দাদের মাফ করে দিবেন শুধুমাত্র যারা মুশরিক, মা-বাবার নাফরমান, টাখনুর নিচে কাপড় পরিধানকারী, নেশা কারী, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী এবং হিংসুক যারা তাদেরকে ছাড়া আল্লাহ সবাইকে মাফ করে দিবেন‌। ইনশাআল্লাহ।

বিভিন্ন হাদিস থেকে ঐ রাত্রের বিভিন্ন ফজিলত সম্পর্কে জানা যায়। কিন্তু মা-বোনদের দিয়ে বিভিন্ন হালুয়া রুটি বানানো এবং বিতরণ করা। ছেলেদের দল বেঁধে কবরস্থানে যাওয়া এবং ফটকাবাজি করা এরকম হাদিসে পাওয়া যায় না।

বিঃদ্রঃ আমরা যেহেতু মুসলিম, সর্বদাই আমরা রাসুল সাঃ অনুসরণ করব (এটাই আমাদের ঈমান)। তাই রাসূল (সাঃ) শবে বরাতের দিন যা কিছু করেন নাই, ওই গুলো ইবাদতে অন্তর্ভুক্ত করবো না‌। শবে বরাতের আমল সম্পর্কে জানুন।

ইসলামের দৃষ্টিতে শবে বরাত

ইসলামের দৃষ্টিতে শবে বরাত একটি ফজিলত পূর্ণ রাত যেটাতে আল্লাহ তার বান্দাদের ক্ষমা করেন। এই বিষয়েই সবচাইতে সহিহ হাদিস যেটা পাওয়া যায় সেটা হচ্ছে, হযরত আ‘লা ইবনুল হারেস থেকে বর্ণিত, হযরত আয়েশা রাযি. বলেন, রাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামাযে দাঁড়ান এবং এত দীর্ঘ সিজদা করেন যে, আমার ধারণা হলো তিনি হয়তো মৃত্যুবরণ করেছেন, আমি তখন উঠে তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলী নাড়া দিলাম, তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলী নড়ল। যখন তিনি সিজদা থেকে উঠলেন এবং নামায শেষ করলেন, তখন আমাকে লক্ষ করে বললেন, হে আয়েশা/হুমাইরা! তোমার কি এ আশংকা হয়েছে যে, আল্লাহর রাসূল তোমার হক নষ্ট করবেন? আমি উত্তরে বললাম, না; ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনার দীর্ঘ সিজদা থেকে আমার আশংকা হয়েছিল, আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন কিনা? নবীজী জিজ্ঞাসা করলেন. তুমি কি জানো এটা কোন রাত? আমি বললাম. আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভাল জানেন। রাসূল তখন ইরশাদ করলেন, এটা অর্ধ শা‘বানের রাত। আল্লাহ তা‘আলা এ রাতে বান্দার প্রতি মনোযোগ দেন এবং ক্ষমাপ্রার্থীদের ক্ষমা করেন ও অনুগ্রহপ্রার্থীদের অনুগ্রহ করেন। আর বিদ্বেষপোষণকারীদের ছেড়ে দেন তাদের অবস্থাতেই। (শু‘আবুল ঈমান-হাদীস নং- ৩৬৩৫)

শবে বরাত আরো যে নামে পরিচিত

এই বিশেষ রজনী স্থানভেদে ভিন্ন ভিন্ন নামে পরিচিত। ইরান ও আফগানিস্তানে “নিম শাবান”, তুরস্কে “বিরাত কান্দিলি”, এবং ভারতীয় উপমহাদেশে “শবে বরাত” বা “নিফসু শাবান” নামে এটি পরিচিত।

রমজান আগমনের বার্তা

সন্ধ্যার আঁধার ঘনিয়ে আসে, যখন রাতের নিস্তব্ধতা নেমে আসে পৃথিবীর বুকে, তখন মুসলিমদের হৃদয়ে জাগ্রত হয় আলোর এক নতুন আশা। পবিত্র শবে বরাতের আগমনী বার্তা বয়ে আনে রমজানের মধুর স্মৃতি, মনকে ছুঁয়ে যায় রহমত ও মাগফিরাতের বার্তা।

সবাই যার যার মত এ রাতে আল্লাহ তাআলার ইবাদত বন্দেগীতে নিজেকে মনোনিবেশ করে। আর এই রাত আমাদেরকে মনে করিয়ে দেয় রমজানের কথা, কেননা এরাবিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী শাবানের পরের মাস’ই হচ্ছে রমজান।

শবে বরাত কি বিদআত?

শবে বরাত বিদআত নয়, তবে এই রাত্রে বিভিন্ন কুসংস্কার করা বিদআত যেমন হালুয়া রুটি এবং আতশবাজি ইত্যাদি। তাই আমাদের এই সমস্ত কুসংস্কার এড়িয়ে যাওয়া আমাদের ঈমানী দায়িত্ব। আর আমরা রাত্রে আল্লাহতালার কাছে বিভিন্ন উপায়ে ক্ষমা প্রার্থনা করব যেমন তওবার নামাজ

শবে বরাত ২০২৪ কত তারিখে?

শবে বরাত ২০২৪ সালের ২৬ শে ফেব্রুয়ারি রোজ সোমবার হবে।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *