খিলাফতে রাশিদায় তারাবী নামায

তারাবি সম্পর্কিত বিভিন্ন ওলামায়ে কেরাম বিভিন্ন গবেষণা করেছেন এবং কত রাকাত এটা নির্ধারণ করেছেন। তবে আমাদেরকে এটাও জানা জরুরী যে, খিলাফতে রাশিদায়ের যুগের তারাবি নামাজ কেমন ছিল এবং কিভাবে পড়তো। তাহলে চলুন সবগুলো জেনে আসি।

হযরত আবু বকর (রা.) এর খিলাফত কাল

হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা.)-এর যুগে সবাই নিজেদের মতো তারাবীপড়ত।

হযরত উমর (রা.) এর খিলাফতকাল

রমযানের প্রতি রাতে ইশার পর বিতরের আগে জামাতের সঙ্গে তারাবী নামায পড়ার এবং তাতে কুরআন খতম করার ধারাবাহিকতা হযরত উমর (রা.)-এর খিলাফতকালে আরম্ভ হয়। সে সময় তারাবীর নামায বিশ রাকাআত পড়া হয়েছে। সাহাবায়ে কেরাম বিশ রাকাআত নামায উপরোক্ত নিয়মেই আদায় করেছেন এবং এ বিষয়ে কারও দ্বিমত ছিল না। সাহাবা, তাবেয়ীন, তাবে-তাবেয়ীন এবং ফুকাহা ও মুহাদ্দিসীনের আমলও এরূপ ছিল। আজ পর্যন্ত হারামাইন শরীফাইনে এই ধারাবাহিকতা বিদ্যমান রয়েছে।

যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তারাবী নামাযের প্রতি উৎসাহ প্রদান করেছেন, কিন্তু ফরয হওয়ার আশঙ্কায় এর নিয়মিত রূপ দিয়ে যাননি তাই তার রুচি ও ইচ্ছা সম্পর্কে অবগত খলীফায়ে রাশেদ হযরত উমর (রা.) আনসার ও মুহাজির সাহাবীগণের সঙ্গে পরামর্শক্রমে তারাবী নামাযের নিয়মিত রূপ প্রদান করেন, যার সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইরশাদ- (الو كَانَ بَعْدِي نَبِيًّا لَكَانَ عُمَرُ) যদি আমার পরে কোন নবী হত তাহলে উমর নবী হত। বলাবাহুল্য; ওহীর ধারাবাহিকতা সমাপ্ত হওয়ার পর এখন আর তারাবি ফরয হওয়ার আশঙ্কা ছিল না।

এসব কিছু সত্ত্বেও এই পবিত্র মাসে একশ্রেণীর মানুষ আট রাকাআতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেন। উপরন্তু এর জন্য বিভিন্ন ধরনের হিলা-বাহানা অন্বেষণ করেন। এর মধ্যে একটি এই যে, ‘তারাবী নামায বিশ রাকাআত হওয়া হযরত উমর (রা.)-এর যুগে সাব্যস্ত হয়েছে।’

প্রশ্ন এই যে, তারাবীর বর্তমান নিয়মিত রূপটিও তো উমর (রা.)-এর যুগেই নির্ধারিত হয়েছে। যথা: পুরা রমযান জামাতের সঙ্গে তারাবী পড়া, বিতরের নামায জামাতে আদায় করা ইত্যাদি। তাহলে শুধু তারাবীর রাকাআত-সংখ্যা বিষয়ে এই আপত্তি কতটুকু যৌক্তিক?

হযরত আবদুর রহমান আলকারী (রহ.) বলেন- আমি রমযান মাসে উমর (রা.)-এর সঙ্গে মসজিদে গেলাম। দেখলাম, লোকেরা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে তারাবী পড়ছেন। কেউ একা পড়ছেন, আবারকেউ দু’ চারজন সঙ্গে নিয়ে পড়ছেন। তখন উমর (রা.) বললেন, ‘এদেরসকলকে যদি এক ইমামের পিছনে জামাতবদ্ধ করে দেই তাহলে মনে হচ্ছে উত্তম হয়।’ এরপর তিনি তাদেরকে উবাই ইবনে কা’ব (রা.)-এর পিছনে জামাতবদ্ধ করে দিলেন।

আবদুর রহমান বলেন, “আরেক রাতে আমরা বের হলাম। লোকেরা এক ইমামের পিছনে তারাবীর নামায পড়ছিল। উমর (রা.) বললেন, ‘এই নিয়ম কত ভালো। তবে রাতের যে অংশে তোমরা নামাযে দণ্ডায়মান হও তা থেকে ওই অংশ উত্তম যে অংশে তোমরা ঘুমিয়ে থাক। অর্থাৎ শেষ রাত।’ বর্ণনাকারী বলেন, তখন প্রথম রাতেই নামায পড়া হত।” (মুয়াত্তা মালিক)

ইয়াযীদ ইবনে রূমান বলেন- ‘উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)-এর যুগে সাহাবায়ে কেরাম তেইশ রাকাআত নামায আদায় করতেন।’ (মুয়াত্তা মালিক)

ইমাম বায়হাকী ‘কিতাবুল মারিফা’য় সাইব ইবনে ইয়াযীদ (রা.) থেকে বর্ণনা করেন- আমরা উমর (রা.)-এর খিলাফতকালে বিশ রাকাআত তারাবী ও বিতর পড়তাম।

নবীর-যুগে তারাবী নামায

ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.)-এর গবেষণা

যখন উমর (রা.) লোকদেরকে উবাই ইবনে কা’ব (রা.)-এর পিছনে একত্র করে দিলেন তখন তিনি বিশ রাকাআত তারাবী ও বিতর পড়তেন। (আল-ফাতাওয়াল মিসরিয়্যা)

উমর (রা.) সকল সাহাবীকে উবাই ইবনে কাব (রা.)-এর পিছনে এক জামাতে একত্র করেছেন। বলাবাহুল্য, উমর (রা.) খুলাফায়ে রাশেদীনের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন, যাঁদের সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমার সুন্নাহ ও আমার হেদায়েতপ্রাপ্ত খলীফাগণের সুন্নাহকে অবলম্বন করবে এবং মাড়ির দাঁত দিয়ে কামড়ে রাখবে।’

মাড়ির দাঁতের কথা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এজন্য বলেছেন যে, এভাবে ধারণ করলে তা মজবুত হয়ে থাকে। তারাবী বিষয়ে উমর (রা.)-এর এই কাজ সুন্নাহর অন্তর্ভুক্ত।” (ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়া)

হযরত উসমান ইবনে আফফান (রা.)-এর খিলাফতকাল

তৃতীয় খলীফায়ে রাশেদ হযরত উসমান ইবনে আফফান (রা.)-এর খিলাফত-কালেও তারাবী নামায বিশ রাকাআত পড়া হত।

সাইব ইবনে ইয়াযীদ বলেন- উমর (রা.)-এর যুগে সাহাবায়ে কেরাম তারাবীর নামায বিশ রাকাআত পড়তেন এবং শতাধিক আয়াতবিশিষ্ট সূরাসমূহ পড়তেন। উসমান (রা.)-এর যুগে দীর্ঘ সময় দণ্ডায়মান থাকার কারণে তারা লাঠিতে ভর দিতেন।’ (সুনানে বায়হাকী: ২/৪৯৬)

তারাবি শব্দের অর্থ, নামকরণ ও শব্দ থেকে তারবি কয় রাকাত

হযরত আলী (রা.)-এর খিলাফত কাল

তৃতীয় খলীফায়ে রাশেদ হযরত আলী (রা.)ও তাঁর খিলাফতকালে তারাবী নামায বিশ রাকাআত পড়ার আদেশ দিয়েছেন।

আবু আবদুর রহমান আস্ সুলামী বলেন, “আলী (রা.) রমযান মাসে কারীদেরকে ডাকলেন এবং আদেশ দিলেন, তারা যেন লোকদের নিয়ে বিশ রাকাআত তারাবী পড়েন। আর বিতর পড়াতেন স্বয়ং আলী (রা.)। (সুনানে বায়হাকী: ২/৪৯৬)

আলী (রা.)-এর একজন শিষ্য শুতাইর ইবনে শাক্ল রমযান মাসে বিশ রাকাআত তারাবী এবং তিন রাকাআত বিতর পড়াতেন। (সুনানে বায়হাকী: ২/৪৯৬)

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *