আযানের জবাব দেওয়ার সঠিক নিয়ম
দৈনিক পাঁচবার আমাদের কানে আজানের সুমধুর সুর ভেসে আসে। তবে আপনি কি একবারও ভেবে দেখেছেন আযানের জবাব কিভাবে দিতে হয়? আযানের জবাব দেওয়াতে রয়েছে অনেক উপকারিতা এবং ফজিলত। হাদিসে পাক থেকে আমরা আযানের জবাবের ফজিলত সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারি।
তাছাড়া আযান দেওয়ার পরবর্তী সময়ে কোন দোয়া করা হলে সেটা আল্লাহ তাআলার নিকট কবুল হয়। তাছাড়া যথাযথ আজানের উত্তর দেওয়াতে রয়েছে চিরস্থায়ী শান্তির স্থান জান্নাতের সুসংবাদ। এক হাদীস থেকে জানা যায়, আজান ও ইকামতের মাঝে যে দোয়া করা হয় তা কবুল হয়।
রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যখন তোমরা আজান শুনবে, এর জবাবে মুয়াজ্জিনের অনুরূপ তোমরাও বলবে।’ (বুখারি, হাদিস : ৬১১)
আযানের জবাব দেওয়ার নিয়ম
আযানের জবাব দেওয়ার নিয়ম হচ্ছে, মুয়াজ্জিন যখন আযানের প্রতিটি বাক্য উচ্চারণের পর একটু নীরব থাকবে, তখন শ্রোতারা মুয়াজ্জিনের অনুরূপ আযানের বাক্যটি বলবে। তবে মুয়াজ্জিন حي على الصلاه ও حي على الفلاح বলার পর শ্রোতাগণ لا حول ولا قوه الا بالله বলবে। আর ফজরের নামাজের আজানে যখন মুয়াজ্জিন الصلاه خير من النوم বলবে তখন শ্রোতাগণ صدقت وبررت বলবে।
ইকামতের জবাব দেওয়ার সময় আযানের জবাবের মতোই বলবে, তবে যখন ইকামত দাতা قد قامت الصلاه বলবে তখন শ্রোতারা اَقَامَهَا اللهُ وَاَدَّمَهَا বলবে।
আজান এর উত্তরে আমরা যে ভুল করি
দৈনন্দিন জীবনে আমরা প্রতিদিন পাঁচবার আযানের শোনার পরে আমাদের আযানটা অনেক এজি হয়ে গেছে। তবে অনেকেই আযানের উত্তর দেয়ার সময় বিভিন্ন ভুল করে ফেলি, যদিওবা আযানের উত্তর হুবহু আজানের মতই (অল্প কিছু পার্থক্য রয়েছে, যা উপরে বলেছি)। আযানের জবাব দেয়ার সময় আমরা সাধারণত যে ভুলগুলো করে থাকি সেগুলো নিচে তুলে ধরা হল:-
১. আমরা অনেকেই আজানের উত্তর দেয়ার সময়, মুয়াজ্জিন যখন ‘ اشهد ان محمد رسول الله ‘ বলে তখন অনেক শ্রোতাগণ দরুদ শরীফ কিংবা ‘সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ পড়ে থাকে। মূলত একটি ভ্রান্ত ধারণা, কোথাও এর সাবেত পাওয়া যায় না। তাই এই ভ্রান্ত ধারণা থেকে আমাদের বেঁচে থাকতে হবে এবং সঠিক আজানের উত্তর দিতে হবে। (দরুদ শরীফ আজানের পরে পড়বে)।
২. আমাদের দেশে অনেক সময় দেখা যায়, বিভিন্ন মানুষ আজান দেওয়ার সময় মুয়াজ্জিন যখন ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ’ বলে তখন বৃদ্ধাঙ্গুলির চুমুকে দুই চোখে মুছে দেই। মূলত এটা একটা ভ্রান্ত ধারণা তাই এটা থেকে আমাদের বেঁচে থাকতে হবে।
৩. আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে যে, কেউ যদি আজানের সময় চুপ না থাকে বা কথা বলে সে বেঈমান হয়ে যাবে বা বেঈমান হয়ে মারা যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মূলত এটাও একটা ভ্রান্ত ধারণা তাই এটা থেকে আমাদের বেঁচে থাকতে হবে। মূলত এর প্রমাণ কোরআন হাদিসে কোথাও পাওয়া যায় না।
যখন দেয়া যাবেনা আযানের উত্তর
আজানের উত্তর দেয়া এটা অত্যন্ত সাওয়াবের কাজ হলেও সব সময় দেয়া যাবে না আজানের উত্তর। এতে কিছু সময় বা অবস্থা রয়েছে যেটাতে আযানের জবাব দেয়া নিষিদ্ধ। সে সব সময় গুলো নীচে দেয়া হলো:
- নামাজরত অবস্থায়: নামাজরত অবস্থায় মুসল্লীগণ আল্লাহর সাথে একান্ত মনোনিবেশ করে। এতে কেউ যদি আজানের জবাব দেয় তাহলে তার নামাজ ভেঙ্গে যাবে। তো নামাজরত অবস্থায় উত্তর দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
- ইস্তিঞ্জার সময়: এ সময়েও উত্তর দেয়া যাবে না, এমনকি শৌচাগারে আল্লাহর নাম নেওয়া কিংবা কোন জিকির-আজকার করাও যাবে না। তাই এ অবস্থায় আজানের উত্তর দেওয়া থেকেও বিরত থাকবে।
- সহবাসরত অবস্থায়: এই অবস্থাতেও উত্তর দেয়া যাবে না।
- পানাহার ও মহিলাদের ঋতু কালীন অবস্থায় আজানের জবাব দেয়া থেকে বিরত থাকবে। তবে আযান শেষ হওয়ার আগে বা অতি তাড়াতাড়ি এগুলো থেকে বেরিয়ে আসেন তাহলে উত্তর দিয়ে নিবেন।
কোরআন শরীফ পড়া অবস্থায় যদি আযান দেয়া হয়, তাহলে কোরআন তেলাওয়াত সাময়িক বন্ধ রেখে আজানের জবাব দেয়া যাবে।
রেডিও টেলিভিশনের আযানের উত্তর দেয়া যাবে কি?
আজকের দিনে টেলিভিশন এবং রেডিওতে নামাজের সময় লাইভ আজান প্রচার করা খুবই সাধারণ। লাইভ আজান হলো এমন আজান যা মুয়াজ্জিন নিজে সরাসরি দেন। এই ধরনের আজান শুনলে আজানের জবাব দেওয়া যাবে।
অন্যদিকে, রেকর্ডকৃত আজান হলো এমন আজান যা আগে থেকে রেকর্ড করা হয় এবং পরবর্তীতে প্রচার করা হয়। এই ধরনের আজান শুনলে আজানের জবাব দেওয়া সুন্নত সম্মত নয়।
সুতরাং, লাইভ আজান শুনলে আজানের জবাব দেওয়া ভালো। তবে, রেকর্ডকৃত আজান শুনলে আজানের জবাব দেওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।
আযানের পর যে দোয়া পড়লে আখেরাতে রাসুলের শাফায়েত মিলে
অনেক মুমিন মুসলমান আজানের পরে যে দোয়াটি পড়া সুন্নত কিংবা হাদিস সম্মত এই দোয়াটি জানেনা। তাদের জন্য বলে রাখা ভালো যে, আপনারা যারা দোয়াটি জানেন না তারা আযানের দোয়া সম্পর্কিত আমার লেখাটি পড়ে আসুন। এই দোয়াটি পড়াতে রয়েছে অনেক ফজিলত এবং গুরুত্ব, যথাযথ আযানের জবাব দেওয়ার পরে দোয়া করলে আল্লাহ তায়ালা কবুল করবেন ইনশাআল্লাহ। আযানের জবাব না দিলে গুনাহ হবে না তবে দেওয়া উত্তম।
আযানের জবাব কিভাবে দিতে হয়?
আযানের জবাব মোয়াজ্জিনের যেভাবে বলবে শ্রোতাগণও ঠিক সেভাবেই বলবে। তবে মোয়াজ্জিন যখন ‘হাইয়্যা আলাস সালাহ’ ও ‘হাইয়্যা আলাল ফালাহ’ বলবে তখন শ্রোতাগণ লা হাওলা ওয়া লা কুউওয়াতা ইল্লাবিল্লাহ’ বলবে। আর ফজরের নামাজের আজানে যখন মুয়াজ্জিন الصلاه خير من النوم বলবে তখন শ্রোতাগণ صدقت وبررت বলবে।
আজানের জবাব দেওয়া কি ওয়াজিব না সুন্নত?
দৈনিক নিয়মিত পাঁচবার আমাদের কানে সবচেয়ে মধুর ধনী আজানের শব্দ দেশে আসে। আর আজানের উত্তর দেওয়া সুন্নত।
আসসালাতু খাইরুম মিনান নাউম এর জবাবে কি বলতে হয়?
আর ফজরের নামাজের আজানে যখন মুয়াজ্জিন ’আসসালাতু খাইরুম মিনান নাউম’ বলবে তখন শ্রোতাগণ صدقت وبررت বলবে।