কসর নামাজের নিয়ম ও বিধান
kosor salat :- ইসলাম এত সহজে যে, কেউ যখন নিজ এলাকা ছেড়ে ৭৮ কিলোমিটার বা তার অধিক সফর/ভ্রমন করবে, তখন তার জন্য আল্লাহর বিধান পালনের ক্ষেত্রে অনেক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে যেমন রোজার ক্ষেত্রে সফররত অবস্থায় রোজা না রেখে পরবর্তীতে কাজা করা যায়। এমনকি সফরত অবস্থায় কেউ যখন শরীয়ত সম্মত মুসাফির হয় তখন নামাজের ক্ষেত্রেও কসর করা যায়।
অনেক সময় আমরা অফিসের কাজে/আনন্দ ভ্রমণ বা কোনো কারণে বিভিন্ন জায়গায় সফর করে থাকি, এটাই জীবনযাত্রার সাধারণ একটি নিয়ম। তবে যখন কেউ নিজ এলাকায় বা বাসস্থলে থাকেন, তখন তাকে পুরোপুরি নামাজ পড়তে হয় তথা নামাজ কসর করা যাবে না। তবে কেউ যখন মুসাফির হবে তখন তার ইসলামিক বিধান হলো কসর নামাজের নিয়ম মুতাবেক নামাজ কসর করা।
তবে তাকে শরীয়ত সম্মত মোসাফির হতে হবে, আর শরীয়ত সম্মত মুসাফির ওই ব্যক্তিকে বলা হয় যে কিনা নিজ বাসস্থান ছেড়ে ৪৮ মাইল বা ৭৮ কিলোমিটার সফর করে। তাই আপনি যদি ৪৮ মাইল বা ৭৮ কিলোমিটার সফর করেন, তখন মুসাফিরের কাতারে আপনার নাম লেখা হবে।
আমাদের মধ্যে এমন অনেক আছেন যারা কিনা, নামাজ কসর করার নিয়ম সম্পর্কে জানেন না। তাই আজকে আমি চিন্তা করলাম আপনাদের সাথে কসর নামাজের নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত শেয়ার করতে এবং এই রিলেটেড আরো কয়েকটা বিষয়।
কসর নামাজের নিয়ম
কসর নামাজের নিয়ম হচ্ছে কোন ব্যক্তি যদি শরীয়া ভিত্তিক মুসাফির হয় তথা ৪৮ মাইল বা ৭৮ কিলোমিটার নিজ এলাকার ছেড়ে কোথাও যায়/ভ্রমণ করে তাহলে চার রাকাত বিশিষ্ট ফরজ নামাজকে দুই রাকাত করে পড়বে।
সাধারণত আমরা অনেক সময় বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ কিংবা সফর করে থাকি, এটা আসলে মানুষের জীবনের সাথেই জড়িত। মানুষ যখন নিজ বাসস্থল, এলাকা বা নিজ গ্রামে তাকে তখন তাকে পূর্ণাঙ্গ নামাজ (চার রাকাতের নামাজ ৪ রাকাতই) পড়তে হয়। কিন্তু যখন আপনি শরীয়তের মুসাফির তথা ৪৮ মাইল বা ৭৮ কিলোমিটার সফর করবেন, তখন আপনি চার রাকাতের নামাজ দুই রাকাত পড়বেন।
সাধারণত কোন একজন ব্যক্তি মুসাফির হলে তখন বিভিন্ন কষ্টের সম্মুখীন হতে হয়। তাই আপনি যখন মুসাফির হবেন আল্লাহর পক্ষ থেকে নামাজ/রোজার ব্যাপারে একটা সুবিধা হচ্ছে নামাজ কসর করা এবং রোজা না রেখে পরবর্তীতে কাজা করা (রোজা রাখতে পারলে উত্তম)।
কসর করার অর্থ হচ্ছে সংক্ষিপ্ত করা, আর কোন একজন ব্যক্তি শরীয়তের পরিভাষায় মুসাফির হলেই নামাজ কসর করাই ইসলামের বিধান। ঠিক একইভাবে রোজার ক্ষেত্রেও মুসাফির থাকা অবস্থায় রোজা না রেখে পরবর্তীতে কাজা দিলেও চলবে, তবে রোজা রাখা উত্তম।
পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আর যখন তোমরা যমীনে সফর করবে, তখন তোমাদের সালাত কসর করাতে কোন দোষ নেই। (সুরা নিসা, আয়াত: ১০১)
সুত্র হাদীস বিডি
কসর নামাজের নিয়ম: কোন মুসাফির ব্যক্তি যখন একাকি বা মুসাফির ইমামের পিছনে নামাজ পড়বে, তখন তার চার রাকাত বিশিষ্ট ফরজ নামাজ কসর করা জরুরী (ওয়াজিব)। আর মুসাফির ব্যক্তি মুকিম ইমামের পিছনে চার রাকাতই পড়বে।
কসর নামাজের দূরত্ব
আপনি যে শহরে/গ্রামে আছেন সেই শহরের শেষ ঠিকানা বা গ্রামের শেষ জনসংখ্যা থেকে শুরু হয়ে ৪৮ মাইল বা ৭৮ কিলোমিটার হচ্ছে কসর নামাজের দূরত্ব। অর্থাৎ আপনি যদি উল্লেখিত দূরত্বের বাহিরে চলে যান, তাহলে আপনাকে চার রাকাতের ফরজ নামাজ দুই রাকাত পড়তে হবে।
কসর নামাজ কতদিন
কসর নামাজ ১৫ দিন এর কম থাকার নিয়ত করলে করা যাবে। অর্থাৎ আপনি যদি শরীয়তের পরিভাষায় মুসাফির হন এবং যে জায়গাতে গিয়েছেন সেখানে যদি ১৫ দিনের কম থাকার নিয়ত করেন, তাহলে চার রাকাত বিশিষ্ট ফরজ নামাজ দুই রাকাত পড়া আপনার জন্য জরুরী।
মুসাফির হওয়ার শর্ত
কোন ব্যক্তি মুসাফির তখনই হবে যখন ৪৮ মাইল বা ৭৮ কিলোমিটার এই শর্তটা পূরণ করবে। তবে কোন ব্যক্তি যদি যে জায়গাতে গিয়েছে সেখানে ১৪ দিন বা এর কম থাকার নিয়ত করে, তাহলে তাকে চার রাকাত বিশিষ্ট ফরজ নামাজ দুই রাকাত পড়তে হবে। সুন্নত বাধ্য হয়ে পড়তে হবে না কিন্তু ওয়াজিব নামাজ যে কোন অবস্থায় পড়া জরুরী।
মুসাফির কি সুন্নত পড়বে
কসরের হুকুম শুধুমাত্র চার রাকাত বিশিষ্ট ফরজ নামাজের উপর অর্থাৎ কোন ব্যক্তি যদি শরয়ী মুসাফির হয়, তখন তাকে চার রাকাত বিশিষ্ট ফরজ নামাজ দুই রাকাত পড়তে হবে। সুন্নাত, নফল এবং ওয়াজিব নামাজের মধ্যে কসরের হুকুম নেই বা কসর করবে না।
মুসাফির সুন্নত পড়ার ব্যাপারে তা’কিদ দেওয়া হয়নি তবে ওয়াজিব নামাজ যেমন বিতিরের নামাজ পড়তে হবে। বিভিন্ন উলামায়ে কেরামের মত হচ্ছে যদি সফরের মধ্যে বেশি তাড়াহুড়া না হয়, তখন সুন্নাতে মুয়াক্কাদা পড়া ভালো। আর যদি সফরের মধ্যে তাড়াহুড়া হয় তাহলে সুন্নতে মুয়াক্কাদা ছেড়ে দিলেও কোন সমস্যা হবে না।
মুসাফির কিভাবে হয়?
কোন নিজ লোকালয় ছেড়ে ৪৮ মাইল বা ৭৮ কিলোমিটার সফর/ভ্রমণ তখন তাকে শরীয়তের পরিভাষায় মুসাফির বলা হয়। আর যদি ওই ব্যক্তি, 15 দিনের কম থাকার নিয়ত করে, তখন তাকে চার রাকাত বিশিষ্ট ফরজ নামাজ দুই রাকাত পড়তে হবে।
কত কিলোমিটার দূরে গেলে কসর নামাজ পড়তে হয়?
৭৮ কিলোমিটার দূরে গেলে কসর নামাজ পড়তে হয়। ঠিক একইভাবে আপনি যদি ৪৮ মাইল দূরে যান সে ক্ষেত্রেও কসরের ফরজ নামাজের বিধান আপনার উপর ওয়াজিব।
কসর শব্দের অর্থ কি?
কসর এটি একটি আরবি শব্দ যার বাংলা অর্থ হচ্ছে কম করা, কমানো বা সংক্ষিপ্ত করা।
কসর নামাজ কত রাকাত?
কসরের চার রাকাত বিশিষ্ট ফরজ নামাজ দুই রাকাত। এটা শুধুমাত্র ফরজ নামাজের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। সুন্নাত, নফল ইত্যাদি পড়লে অবশ্যই যেমন আছে তেমন পড়তে হবে (কসর করা যাবে না)। ওয়াজিব নামাজ যে কোন অবস্থাতেই পড়তে হবে কসরও করা যাবে না।
কসর নামাজ কোন ওয়াক্তে কত রাকাত?
কসরে প্রত্যেক চার ওয়াক্ত নামাজ দুই রাকাত পড়তে হবে যেমন জুহুর, আসর এবং এশা। এই নামাজগুলো সাধারণত কসর করা হয়।