জুমার নামাজ কত রাকাত ও পড়ার নিয়ম

সাপ্তাহিক মুসলমানদের অন্যতম একটা প্রধান দিন হচ্ছে শুক্রবার, শুক্রবারে জুমার নামাজ আদায় করা হয় বলেই এই দিনকে এত প্রাধান্য দেওয়া হয়। তবে জুমার নামাজ কত রাকাত, জুমার নামাজের নিয়ম কি এসব বিষয় নিয়ে আমরা অনেকেই জানিনা। তাই আজকে আমি আপনাদেরকে এই বিষয়গুলো জানানোর জন্য একটা আর্টিকেল শেয়ার করতেছি।

অন্যান্য দিনের চেয়ে আমাদের দেশে দেখা যায় জুমার দিন সবচেয়ে বেশি মুসল্লী জমায়েত হয়। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সবাই জুমার নামাজ আদায় করে এবং খুতবা শুনে। এর বিনিময়ে আল্লাহ তায়ালা আমাদের বিগত এক সপ্তাহের গুনা এবং আরো অতিরিক্ত তিন দিনের গুনাহ ক্ষমা করে দেন।

আরো পড়ুন:- ইস্তেখারা নামাজের নিয়ম ও দোয়া

তাই এই গুরুত্বপূর্ণ নামাজ টা কিভাবে পড়তে হয় জুমার রাকাত সংখ্যা কত এইসব বিষয় নিয়ে অনেকেই google এ প্রশ্ন করে থাকেন। তাদের জন্যই মূলত আজকের এই আর্টিকেলটি লেখা হচ্ছে যেন বিস্তারিত জানতে পারেন। তাহলে চলুন আর কথা না বাড়িয়ে আমরা আর্টিকেলের প্রতি মনোযোগ দিই।

জুমার নামাজ কত রাকাত

ইসলামী শরীয়া মোতাবেক জুমার দিন জোহরের নামাজের সময় ৪ রাকাত সুন্নতে মুয়াক্কাদা ২ রাকাত ফরজ ৪ রাকাত সুন্নতে মুয়াক্কাদা এবং ২ রাকাত সুন্নতে গাইরে মুয়াক্কাদা পড়তে হয় (কারো কারো মতে এই দুই রাকাতও সুন্নতে মুয়াক্কাদা)। সুন্নাতে গায়রে মুয়াক্কাদা সহ সব মিলিয়ে মুসল্লীরা মোট ১২ রাকাত নামাজ পড়ে থাকে। সুন্নতের ব্যাপারে মতানৈক্য থাকলেও দুই রাকাত ফরজের ব্যাপারে কারো এখতেলাফ বা মতানৈক্য

জুমার দিন জোহরের নামাজের সময় জোহর নামাজের পরিবর্তে এবং জুমার নামাজ সহ মোট দুই রাকাত ফরজ পড়তে হয়। সময় এক হলেও জুমার নামাজ এবং জোহরের নামাজের মধ্যে নিয়মের ক্ষেত্রে কিছু পার্থক্য রয়েছে। ইশরাকের নামাজ পড়ার নিয়ম সম্পর্কে জানাও আপনার অত্যন্ত প্রয়োজন।

প্রতি জুমাবারে মুমিন মুসলমান জোহরের সময় একত্রিত হয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এই নামাজ আদায় করে তাকে। জুমা এটি একটি আরবি শব্দ যার বাংলা অর্থ হচ্ছে একত্রিত হওয়া বা জমা হওয়া। যেহেতু এই দিন মুসলমানদের বড় জমায়েত হয় এবং জামাতের সাথে জুমার নামাজ আদায় করা হয়, তাই জুমা বলে নামকরণ করা হয়েছে।

জুমার নামাজের গুরুত্ব এবং ফজিলত সম্পর্কে আল্লাহতালা কুরআনে কারিমের মধ্যে ঘোষণা করেন:-

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِذَا نُوۡدِیَ لِلصَّلٰوۃِ مِنۡ یَّوۡمِ الۡجُمُعَۃِ فَاسۡعَوۡا اِلٰی ذِکۡرِ اللّٰهِ وَ ذَرُوا الۡبَیۡعَ ؕ ذٰلِکُمۡ خَیۡرٌ لَّکُمۡ اِنۡ کُنۡتُمۡ تَعۡلَمُوۡنَ – فَاِذَا قُضِیَتِ الصَّلٰوۃُ فَانۡتَشِرُوۡا فِی الۡاَرۡضِ وَ ابۡتَغُوۡا مِنۡ فَضۡلِ اللّٰهِ وَ اذۡکُرُوا اللّٰهَ کَثِیۡرًا لَّعَلَّکُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ

‘হে মুমিনগণ! জুমার দিনে যখন নামাজের আজান দেওয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের পানে তাড়াতাড়ি করো এবং বেচাকেনা বন্ধ করো। এটা তোমাদের জন্যে উত্তম যদি তোমরা বুঝ। এরপর নামাজ সম্পন্ন হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ (রিজিক) তালাশ কর ও আল্লাহকে অধিক স্মরণ করো, যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ (সুরা জুমুআ : আয়াত ৯-১০)

জুমার নামাজ পড়ার নিয়ম

প্রতি শুক্রবারে জোহরের সময় দুই রাকাত জুমার নামাজ পড়া ফরজ। জুমার নামাজের আগে এবং পরে চার রাকাত করে সুন্নতে মুয়াক্কাদা রয়েছে এবং জুমার ফরজ নামাজের আগে মসজিদে প্রবেশের পরে দুই রাকাত দুখুলুল মসজিদ রয়েছে।

জুমার নামাজ অবশ্যই জামাতের সাথে পড়তে হবে, একাকী জুমার নামাজ পড়ার কোন নিয়ম নেই। কোরআনে কারিমে বলা আছে যে, যখন জুমার আজান হবে তখন সমস্ত কাজকর্ম বন্ধ করে দিতে হবে।

কেউ যদি জুমার নামাজ জামাতের সাথে আদায় করতে না পারে এবং যদি আর জামাতে অংশগ্রহণের সুযোগ না থাকে তাহলে সে চার রাকাত যোহরের নামাজ আদায় করবে। জরুরী কারণ অসুস্থ অসুস্থ ব্যক্তি বা ওজর ছাড়া জুমার নামাজে অংশগ্রহণ না করার সুযোগ নেই।

মুসাফিরের নামাজের নিয়মের ক্ষেত্রেও অর্থাৎ কেউ শরয়ী মুসাফির হলে তার জন্য জুমার নামাজ পড়া জরুরী নয় বরং জোহরের নামাজ আদায় করলেও চলবে। সুতরাং জুমার দিন মুসল্লিরা জুম্মার আযানের পর সমস্ত কাজকর্ম বন্ধ করে দিয়ে প্রথমে ২ রাকাত দুকুলুল মসজিদ, ৪ রাকাত সুন্নত মুয়াক্কাদা এবং ভালোভাবে খুতবা শুনবে। তারপর ইমামের সাথে ২ রাকাত জুমার ফরজ নামাজ আদায় করে চার রাকাত সুন্নতে মুয়াক্কাদা পড়বে।

জুমা এবং যোহরের নামাজের মধ্যে কিছু পার্থক্য

যদিও আমরা জুমার নামাজ জোহরের সময় পড়ে থাকি তারপরেও জোহর এবং জুমার মধ্যে কিছু নিয়মগত পার্থক্য রয়েছে যেগুলো নিচে দেওয়া হল।

  • জোহরের ফরজ চার রাকাত
  • জোহরের নামাজে কেরাত চুপাইয়া পড়ে
  • জোহরের নামাজে খুতবা নেই
  • জুমার ফরজ দুই রাকাত
  • জুমার নামাজে কেরাত আওয়াজ দিয়ে পড়তে হয়
  • জুমার নামাজের আগে খুতবা রয়েছে

জুমার ফরজ নামাজের আগে ও পরে সুন্নাত কত রাকাত

জুমার দিন নির্দিষ্ট সময়ে জুমার নামাজ আদায় করতে হয়। জুমার নামাজ আদায় আগে ও পরে কিছু সুন্নত নামাজ রয়েছে তারমধ্যে মসজিদে প্রবেশের পর দখুলুল মসজিদ ২ রাকাত এবং জুমার নামাজের আগে ৪ রাকাত সুন্নতে মুয়াক্কাদা (কবলুল জুমা)। দুই রাকাত জুমার নামাজের ফরজ আদায় করার পরে আরো ৪ রাকাত সুন্নতে মুয়াক্কাদা রয়েছে (বা’দাল জুমা)। মোট ৩ নিয়ত ১০ রাকাত সুন্নত রয়েছে জুমার নামাজের আগে ও পরে।

জুমার পর সুন্নত কত রাকাত?

জুমার দুই রাকাত ফরজ নামাজের পরে চার রাকাত সুন্নতে মুয়াক্কাদা রয়েছে। আমরা অনেকেই আছি যারা এই সুন্নত টা না পড়ে সাথে সাথে মসজিদ থেকে বের হয়ে যায়, এটা করা যাবে না।

জুমার নামাজের জন্য শর্ত কি কি?

জোহরের সময় পড়া, শহর বা উপশহর হওয়া, জমাত হওয়া, খুতবা দেওয়া এবং সকলের জন্য অনুমতি থাকা ইত্যাদি।

ইসলামিক জুমার দিনে কোন সূরা পড়তে হয়

জুমার দিনে সূরা কাহাফ পড়তে হয় এর অনেক ফজিলত রয়েছে যেমন আগামী জুমা আসা পর্যন্ত পাঠকারীর উপর নূর বর্ষিত হবে।

জুমার নামাজ মোট কত রাকাত

জুমার ফরজ নামাজ দুই রাকাত। আবার জুমার আগে তথা কাবলাল জুমা চার রাকাত (সুন্নত) এবং বা’দাল জুমা চার রাকাত (সুন্নত) বলতে গেলে মোট ১০ রাকাত এবং জোহরের নামাজের মধ্যে অতিরিক্ত নফল নামাজও পড়া যায়।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *