ইস্তেখারা নামাজের নিয়ম, দোয়া ও ফজিলত
আজকে আমরা জানবো ইস্তেখারা নামাজের নিয়ম এবং ইস্তেখারার দোয়া। দৈনন্দিন জীবনে আমরা প্রতিদিন কোন না কোন সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকি যেমন বিয়ে করা, নতুন কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান শুরু করা ইত্যাদি। তো এখন আমাদের নিত্যনতুন নেওয়া সিদ্ধান্তের মধ্যে কোনটা আমার জন্য কল্যাণকর হবে এটা জানাতো অত্যন্ত জরুরী।
ইসলাম এতটাই সুন্দর যে, মানুষ কিভাবে সিদ্ধান্ত নেবে এবং কোন সিদ্ধান্তটা ওর জন্য কল্যাণকর হবে, সিদ্ধান্ত কিভাবে বাছাই করবে বা কোনটা কল্যাণকর এটারো দিক নির্দেশনা রয়েছে। সিদ্ধান্তটা একেবারেই আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে নির্দিষ্ট একটা নামাজের মাধ্যমে, আর এটাকে বলা হয় ইস্তেখারা নামাজ।
আরো পড়ুন:- তওবা নামাজের নিয়ম ও তওবার দোয়া
আমাদেরকে রাসূল (সাঃ) ইস্তেখারার নামাজ পড়ার শিক্ষা দিয়েছেন এবং এটার অনেক গুরুত্ব রয়েছে। তো কিভাবে পড়বেন, ইস্তেখারার দোয়া, ফজিলতসহ নানা বিষয় সম্পর্কে জানতে আমাদের এই আর্টিকেলটা পড়তে হবে। এখানে আমি সবগুলো আপনাদের সাথে সহজ ভাষায় তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।
ইস্তেখারা কি?
ইস্তেখারার অর্থ হলো আল্লাহ তাআলার নিকট কোন কাজের জন্য ভালো কিছু প্রার্থনা করা। ইস্তেখারা করার পরে স্বপ্নে দেখা জরুরি নয় বরং যার দিকে আপনার দিল বেশি ঝুঁকবে সেটা আপনার জন্য কল্যাণকর বলে মনে করতে হবে।
ইস্তেখারার মূল হাকিকত হচ্ছে আল্লাহর নিকট দোয়া করা। ইস্তেখারা করা মানে আল্লাহতালা নিকট এটা চাওয়া যে, আমি যে কাজটা করতেছি (যে কাজের ইস্তেখারা করতেছি) সেই কাজটা যদি আমার জন্য কল্যাণকর হয় তাহলে সেটা আমাকে করতে দিও। আর যদি আমি যে কাজটা করতেছি সেখানে কোন অকল্যাণ থাকে তাহলে যেন সেটা আমি না করি।
আশরাফ আলী তানভী (রহঃ)
এস্তেখারা করার পরে আপনাকে দেখতে হবে আপনার দিল কোন কাজের দিকে ঝুঁকতেছে বা পছন্দ করতেছে। যে কাজের দিকে আপনার দিল যাবে, সেটাকে মনে করতে হবে আপনার জন্য কল্যাণকর এবং সেটাতে বিশ্বাস রেখে আপনাকে কাজ চালিয়ে যেতে হবে।
ইস্তেখারা করার পরে জরুরী নয় যে, এটা আপনাকে করতেই হবে। এমনকি ইস্তেখারার করার পরে অন্যান্য মানুষের নিকট সে ব্যাপারে আলোচনা করাও যাবে, এমন কি সিদ্ধান্তও নেয়া যাবে।
ইস্তেখারা নামাজের নিয়ম ও দোয়া
ছোট বড় নতুন কোন কাজ শুরু করার আগে ইস্তেখারা করা সুন্নত। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) সাহাবায়ে কেরামদের কোরআনের সূরা শিক্ষা দেয়ার মত করে এই নামাজের শিক্ষা দিয়েছেন। আপনি যদি আপনার ছোট বড় কোন কাজের মধ্যে কল্যাণ পেতে চান তাহলে ইস্তেখারা করতে হবে।
ইস্তেখারা এটি একটি আরবি শব্দ যার বাংলা অর্থ হচ্ছে কল্যাণ প্রার্থনা করা বা এমন কিছু প্রার্থনা করা যেটাতে কল্যাণ নিহিত রয়েছে। তাই আপনার কাজটি কল্যাণ হবে কিনা এই বিষয়টা সরাসরি আল্লাহর কাছ থেকে ইঙ্গিত পেতে চাইলে ইস্তেখারা করতে হবে। এক্ষেত্রে ইস্তেখারার নিয়তি দুই রাকাত নামাজ পড়ে ইস্তেখারার দোয়া পড়ার মাধ্যমে এই কাজটি করতে পারেন। নিয়ম এবং দোয়া নিচে দেওয়া হল:-
আরো পড়ুন:- গর্ভবতী মায়ের নামাজের নিয়ম
ইস্তেখারা নামাজের নিয়ম
প্রথমে অন্যান্য নামাজের মত উত্তমরুপে অজু করবেন এবং নামাজের সমস্ত শর্ত-শরায়েত (শরীর পাক, কাপড় পাক ইত্যাদি) পূরণ করে নিবে। ওজু করার পরে ইস্তেখারা নিয়তে দুই রাকাত (নফল) নামাজ আদায় করবেন। তারপরে নিম্নে লিখিত দোয়া (ইস্তেখারার দোয়া) পড়বেন, আর দোয়ার মধ্যে هَذَا الأَمْرَ জায়গাতে পৌছাবেন তখন আপনার কাজের কথা স্মরণ করবেন।
ইস্তেখারার দোয়া আরবি
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْتَخِيرُكَ بِعِلْمِكَ ، وَأَسْتَعِينُكَ بِقُدْرَتِكَ ، وَأَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ الْعَظِيمِ ، فَإِنَّكَ تَقْدِرُ وَلا أَقْدِرُ ، وَتَعْلَمُ وَلا أَعْلَمُ وَأَنْتَ عَلامُ الْغُيُوبِ ، اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الأَمْرَ () خَيْرٌ لِي فِي دِينِي وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي وَعَاجِلِهِ وَآجِلِهِ ، فَاقْدُرْهُ لِي وَيَسِّرْهُ لِي ثُمَّ بَارِكْ لِي فِيهِ وَإِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الأَمْرَ شَرٌّ لِي فِي دِينِي وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي وَعَاجِلِهِ وَآجِلِهِ فَاصْرِفْهُ عَنِّي ، وَاصْرِفْنِي عَنْهُ ، وَاقْدُرْ لِيَ الْخَيْرَ حَيْثُ كَانَ ، ثُمَّ رَضِّنِي بِهِ
ইস্তেখারা নামাজের দোয়া বাংলা উচ্চারণ
আল্লা-হুম্মা ইন্নী আস্তাখীরুকা বিইলমিকা অ আস্তাক্দিরুকা বি কুদরাতিকা অ আসআলুকা মিন ফায্বলিকাল আযীম, ফাইন্নাকা তাক্দিরু অলা আক্দিরু অতা’লামু অলা আ’লামু অ আন্তা আল্লা-মুল গুয়ূব। আল্লা-হুম্মা ইন কুন্তা তালামু আন্না হা-যাল আমরা ( ) খাইরুল লী ফী দীনী অ মাআ’শী অ আ’কিবাতি আমরী অ আ’-জিলিহী অ আ-জিলিহ, ফাক্দুরহু লী, অ য়্যাসসিরহু লী, সুম্মা বা-রিক লী ফীহ। অ ইন কুন্তা তা’লামু আন্না হা-যাল আমরা শাররুল লী ফী দীনী অ মাআ’শী অ আ’-কিবাতি আমরী অ আ’-জিলিহী অ আ-জিলিহ, ফাস্বরিফহু আন্নী অস্বরিফনী আনহু, অক্বদুর লিয়াল খাইরা হাইসু কা-না সুম্মা রায্বযিনী বিহ।
Need Attention:– আর আপনি ইস্তেখারার দোয়া পড়ার শুরুতে এবং শেষে যদি আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা এবং দরুদ শরীফ পড়েন তাহলে দোয়া কবুল হওয়ার চান্স বেশি থাকে।
ইস্তেখারার নামাজ পড়ার সময়
যে সব সময় নফল নামাজ পড়া মাকরুহ/নিষিদ্ধ ওই সময় ব্যতীত আর যে কোন সময় ইস্তেখারার নামাজ পড়া যাবে। মাকরুহ সময়গুলো হচ্ছে ১. সূর্যোদয় ২. সূর্য যখন মাঝখানে হয় ৩. সূর্য অস্ত যাওয়ার সময় ৪. সুবহে সাদিকের পরে ৫. ফজর এবং আসরের নামাজের পরে নফল এবং অন্যান্য নামাজ এমনকি ইস্তেখারার নামাজ পড়াও মাকরুহ।
আরও পড়ুন :- নফল,সুন্নত এবং ফরজ নামাজের নিয়ম [চার,তিন,দুই রাকাত]
ইস্তেখারা নামাজের ফজিলত
আমারা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকি তবে সবগুলোতে আমরা ভালো ফলাফল পায় নাকি প্রায় সময় ব্যর্থ হয়? অবশ্যই এটাই সঠিক। তবে ইসলামের নীতি এমন সুন্দর যে, যখন আমরা নতুন কোন একটা কাজ শুরু করব তখন আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইবো নামাজের মাধ্যমে। আর এটাই হচ্ছে ইস্তেখারার নামাজ। তবে সালাতুল হজত পড়বো কোন কিছুর প্রয়োজন হলে। আর ইস্তেখারা নামাজের মধ্যে রয়েছে অসংখ্য ফজিলত।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি ইস্তিখারা করে সে ব্যর্থ হয় না, যে পরামর্শ করে সে লজ্জিত হয় না এবং যে মিতব্যয়ী হয় সে দরিদ্র হয় না। (কানযুল উম্মাল, হাদীস: ২১৫৩২)
ইস্তেখারার ছোট দোয়া
ইস্তেখারার নামাজের জন্য নির্দিষ্ট কোন ছোট দোয়া নেই, তবে এক হাদীসে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো কাজের ইচ্ছা করলে ”اللَّهُمَّ خِرْ لِي، وَاخْتَرْ لِي” এই দোয়া পড়তেন।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমার জন্য কল্যাণের ফায়সালা করো এবং কল্যাণকর বিষয় নির্বাচন করো।