মোজার উপর মাসেহ [নিয়ম, সময়সীমা, শর্ত]

চামড়ার মোজা যদি টাখনুর উপর পর্যন্ত পা আবৃত করে তাহলে অযুতে এর উপর মাসেহ করা জায়েয। যে সুতি মোজায় চামড়া লাগানো থাকে কিংবা যা চামড়ার মতো শক্ত মোটা কাপড়ের তৈরি তাও পূর্ববর্তী মুহাদ্দিসীন ও ফুকাহায়ে কেরামের মতে চামড়ার মোজার স্থলাভিষিক্ত এবং তার উপর মাসেহ করা জায়েয। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চামড়ার মোজার উপর মাসেহ করেছেন।

হযরত মুগীরা ইবনে শু’বা (রা.) বলেন- তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অযু করিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অযু করলেন এবং চামড়ার মোজায় মাসেহ করলেন। মুগীরা (রা.) এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি অযু অবস্থায় এই মোজা পরিধান করেছি। (সহীহ বুখারী: ১/৩৩; সহীহ মুসলিম: ১/১৩৪)

ফকীহগণ কাপড়ের মোজার উপর মাসেহ জায়েয হওয়ার জন্য ওই বৈশিষ্ট্যগুলোকে শর্ত করেছেন যার মাধ্যমে কাপড়ের মোজা চামড়ার মোজার স্থলাভিষিক্ত হয় এবং চামড়ার মোজায় মাসেহের অনুমোদনের আওতায় প্রবেশ করে।

তাঁদের কেউ বলেছেন, ‘কাপড়ের মোজায় উপরে-নিচে চামড়া লাগানো থাকলে তা চামড়ার মোজার স্থলাভিষিক্ত হবে।’ কারও মত হল, শুধু নিচে চামড়া লাগানো থাকলে তা চামড়ার মোজার স্থলবর্তী হবে। আবার কেউ বলেছেন, শক্ত মোটা কাপড়ের মোজাও এ বিধানের অন্তর্ভুক্ত হবে।

হযরত সা’দ ইবনে আবী ওয়াক্কাস (রা.) থেকে বর্ণিত- নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চামড়ার মোজার উপর মাসেহ করেছেন।’ (সহীহ বুখারী: ১/৩৩)

আল্লামা ইবনে হাজার (রহ.) বলেছেন, ‘চামড়ার মোজায় মাসেহ জায়েয হওয়ার বিষয়ে সকল সাহাবী একমত। এই বিষয়টি সত্তরজনেরও অধিক সাহাবীথেকে বর্ণিত হয়েছে। সাহাবীগণের মধ্যে যাদের সম্পর্কে দ্বিমত পোষণের কথাবর্ণিত হয়েছে, তাদের সম্পর্কে অন্য সব সাহাবীর সঙ্গে ঐকমত্য পোষণের কথাওবর্ণিত আছে।

মোজার উপর মাসহের সময়সীমা

মুসাফিরের জন্য প্রতিবার মোজা পরিধানের পর তিন দিন তিন রাত পর্যন্ত এবং মুকীমের জন্য (যারা মুসাফির নয়) এক দিন এক রাত পর্যন্ত মাসেহ করা জায়েয।

হযরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসাফিরের জন্য মাসহের সময়সীমা তিন দিন তিন রাত এবং মুকীমের জন্য এক দিন এক রাত নির্ধারণ করেছেন।’ (সহীহ মুসলিম: ১/১৩৫)

মোজার উপর মাসহের নিয়ম

হাতের আঙ্গুলগুলো পানিতে ভেজাবে এবং তিন আঙ্গুল মোজার অগ্রভাগে রেখে উপর দিকে টেনে আনবে।

হযরত আলী (রা.) বলেছেন- যদি নিছক যুক্তির ভিত্তিতে দ্বীনী মাসাইল নির্ধারিত হত তাহলে মোজার উপরের অংশে নয়, নিচের অংশে মাসেহ করা হত। কিন্তু আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মোজার উপরের অংশে মাসেহ করতে দেখেছি।’ (সুনানে আবু দাউদ: ১/২২; তালখীস: ১/১৬০)

সাধারণ মোজার উপর মাসহের আলোচনা

সুতি, নাইলন বা উলেন মোজার উপর মাসেহ করা জায়েয নয়। হাদীস শরীফে কিংবা আছারে সাহাবায় কোথাও এ জাতীয় মোজার উপর মাসেহ করার অনুমতি বিদ্যমান নেই। তাই এরূপ মোজার উপর মাসেহ করলে অযু হবে না। অতএব নামাযও হবে না।

আল্লামা মুবারকপুরী (রহ.) লেখেন- বিচার-বিশ্লেষণের পর আমার সিদ্ধান্ত এই যে, সাধারণ মোজার উপর মাসেহ সম্পর্কে এমন কোনো মারফু হাদীস পাওয়া যায় না, যাতে মুহাদ্দিসগণের আপত্তি নেই।

(তুহফাতুল আহওয়াযী: ১/২৮১)

প্রসিদ্ধ গায়রে মুকাল্লিদ আলিম মিয়া নাযীর হুসাইন দেহলভী (রহ.) কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, সুতি মোজার উপর মাসেহ জায়েয আছে কি? তিনি উত্তরে বলেন, “এ ধরনের মোজার উপর মাসেহ জায়েয নয়। কেননা এর পক্ষে কোনো দলীল নেই। যারা এর পক্ষে দলীল দিয়েছেন তাদের দলীলগুলো ত্রুটিমুক্ত নয়।”

এরপর সে ত্রুটি আলোচনা শেষে লেখেন- “মোটকথা, কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা, কিয়াস তথা শরীয়তের কোনো দলীল দ্বারা এ জাতীয় মোজার উপর মাসহের বৈধতা প্রমাণিত হয় না।”

এখানে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সেই সতর্কবাণী অবশ্যই স্মরণ রাখা উচিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন অযুকারীকে দেখলেন তার পায়ের গোড়ালি শুকনা রয়েছে। তিনি তখন সতর্ক করে বললেন- ‘এমন শুকনা গোড়ালির জন্য জাহান্নামের শাস্তি রয়েছে।’ (সহীহ মুসলিম: ১/১২৪)

শরীয়তের দলীল দ্বারা যেহেতু পাতলা মোজায় মাসহের বৈধতা প্রমাণিত নয় তাই এতে মাসহ করা পা না-ধোয়ার শামিল। অতএব তা হাদীসের উপরোক্ত সতর্কবাণীর অন্তর্ভুক্ত হবে।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *