ঋণ পরিশোধের দোয়া জেনে নিন
কমবেশি আমরা জীবনে একবার হলেও ঋণের দ্বারস্থ হয়। আমরা অনেকেই হোটেল পরিমাণ ঋণ নেওয়ার পরে আর সেগুলো পরিশোধ করতে পারিনা। তবে চিন্তার কোন কারন নেই, ইসলামে আমাদের সকল বিষয় চিন্তা করে দিকনির্দেশনা দিয়েছে।
কোরআন হাদিস এমন দোয়া রয়েছে যেগুলো যদি আপনি নিয়মিত পাঠ করেন তাহলে স্বয়ং আল্লাহ তা’আলা আপনার ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা করে দিবেন। প্রতিনিয়ত দোয়া পড়ার পাশাপাশি ঋণগ্রস্থদের পরিষদের প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে এবং প্রতিনিয়ত নামাজের মধ্যে আল্লাহ তায়ালার কাছে চাইতে হবে।
দৈনন্দিন জীবনে প্রতিনিয়তই আমাদের কাছে কোন না কোন বোঝা আসতেই থাকে, আর এর পরিত্রান পেতে আমরা আল্লাহতালার কাছে সাহায্য চাই। ঠিক একই ভাবে ঋণের বোঝাও অন্যতম একটা অসহনীয় বিষয়। ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিরা সাধারণত প্রতিনিয়তই বিভিন্ন চাপে থাকে যেমন বিভিন্ন সমস্যা ইত্যাদি।
এমনকি অনেকেই আত্মহত্যার মতো জঘন্য একটা পাপ বেঁচে নেই। এখন আর হতাশ নয়, আমরা যদি ঋণগ্রস্ত হই তাহলে ঋণ পরিশোধের দোয়া প্রতিনিয়তই পড়তে হবে এবং সদা সর্বদা আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে হবে। তাই আজকের আর্টিকেলে ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিদের জন্য কিছু নসিহত এবং হাদিস তুলে ধরার চেষ্টা করব।
হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, ‘একজন চুক্তিবদ্ধ গোলাম (ক্রীতদাস) তাঁর কাছে এসে বলে, আমার চুক্তির অর্থ পরিশোধ করতে আমি অপরাগ হয়ে পড়েছি। আমাকে আপনি সহযোগিতা করুন। তিনি বললেন, আমি তোমাকে কি এমন একটি বাক্য শিখিয়ে দেব না; যা আমাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শিখিয়েছিলেন? যদি তোমার উপর সীর (সাবীর) পর্বত পরিমাণ ঋণও থাকে তবে আল্লাহ তাআলা তোমাকে তা পরিশোধের ব্যবস্থা করে দেবেন। তিনি বললেন, তুমি বল-
اللَّهُمَّ اكْفِنِي بِحَلاَلِكَ عَنْ حَرَامِكَ، وَأَغْنِنِي بِفَضْلِكَ عَمَّنْ سِوَاكَ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাকফিনি বিহালালিকা আন হারামিকা ওয়া আগনিনি বিফাদলিকা আম্মান সিওয়াক।
অর্থ: হে আল্লাহ তুমি আমাকে হারাম থেকে বাঁচিয়ে তোমার প্রদত্ত হালাল রিজিক আমার জন্য যথেষ্ট করে দাও এবং অনুগ্রহ করে তুমি ব্যতীত অন্যের থেকে আমাকে অমুখাপেক্ষী করো।
আমাদের প্রতিনিয়ত সকাল সন্ধ্যা ঋণ মুক্তির জন্য আল্লাহতালার কাছে প্রার্থনা করতে হবে। সেই সাথে অবশ্যই প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে যেন আমার ঋণটা পরিশোধ করতে পারি। তবেই আল্লাহ তায়ালা আমাদের ডাকে সাড়া দিবেন এবং ঋণ মুক্তির ব্যবস্থা করে দিবেন।
নবী করীম সাঃ চিন্তা-পেরেশানি থেকে মুক্তির পাশাপাশি ঋণ মুক্তির জন্যও আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতেন। তাই আমাদের কেউ রাসুলের দেখানো পথে হাঁটতে হবে এবং সদা-সর্বদা নামাজ এবং অন্যান্য দোয়ার মাধ্যমে ঋণমুক্তির সাহায্য চাইতে হবে।
বিভিন্ন ঋণ মুক্তির দোয়া অর্থ ও উচ্চারণ
১. প্রথম যে দোয়াটির কথা বলব, সেটা স্বয়ং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবী আবু উমামা রা.কে শিক্ষা দিয়েছিলেন যিনি ঋণগ্রস্ত এবং পেরেশানি ছিলেন। স্বয়ং তিনি বলেছেন সকাল-সন্ধ্যা এই দোয়াটি পড়ার পর তিনি পেরেশানি এবং ঋণ মুক্ত হয়েছেন।
اَللّٰهُمَّ اِنِّـيْۤ اَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحُزْنِ، وَاَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْعَجْزِ وَالْكَسَلِ، وَاَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْجُبْنِ والْبُخْلِ، وَاَعُوْذُ بِكَ مِنْ غَلَبَةِ الدَّيْنِ وَقَهْرِ الرِّجَالِ
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি দুশ্চিন্তা ও পেরেশানী থেকে, অক্ষমতা ও অলসতা থেকে এবং আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি ভীরুতা ও কৃপণতা থেকে, আরো আশ্রয় চাচ্ছি ঋণ প্রবল হওয়া ও মানুষের কঠোর আচরণ থেকে।
২. ঋণ থেকে মুক্তি পেতে নিম্নের দোয়াটিও আমরা পড়তে পারি। এটিও হাদিসে বর্ণিত একটি দোয়া:-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ، وَالْعَجْزِ وَالْكَسَلِ، وَالْبُخْلِ وَالْجُبْنِ، وَضَلَعِ الدَّيْنِ وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ
বাংলা উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘উযু বিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি, ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিনাল-‘আজযি ওয়াল-কাসালি, ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিনাল-বুখলি ওয়াল-জুবনি, ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিন দ্বালা‘য়িদ্দাইনি ওয়া গালাবাতির রিজা-ল।
বাংলা অর্থ: ‘হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি দুঃশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অপারগতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকে। (সহিহ বুখারি, হাদিস নং ২৮৯৩) সুত্র – যুগান্তর
ঋণমুক্তি সম্পর্কে কিছু কথা
আসলে আমরা অনেকেই বিভিন্ন সময় বিজ্ঞ আলেম এর কাছে ঋণ মুক্তির বিভিন্ন দোয়া দরুদ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে থাকি। এক কথায় বলতে গেলে এটা খুব ভালো একটা বিষয়, তবে এমন অনেক আছে যারা দোয়া ঠিকই জিজ্ঞেস করে কিন্তু ঋণ পরিশোধের বেলায় অবহেলা করে।
ইনশাআল্লাহ তাআলা আপনার দোয়া তখনই কবুল করবেন যখন আপনি দোয়ার পাশাপাশি ঋণ মুক্তির প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবেন। মনে করেন আপনার কাছে কেউ এক লক্ষ টাকা পায়, এখন আপনার কাছে নগদ টাকা না থাকলেও এমন একটা জমি আছে যার দাম এক লাখ টাকা বা এর উপরে।
তো এখন আপনি যদি সত্যিই ঋণ পরিশোধ কারী হয়ে থাকেন বা ঋণ পরিশোধ করতে চান তাহলে অবশ্যই দোয়ার পাশাপাশি আপনার জমি বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করতে হবে। এমন নয় যে, আপনার হাতে যখন নগদ টাকা আসবে তখনই আপনি পরিশোধ করবেন।
অবশ্যই আপনার কাছে নগদ টাকা, যায় কিছু থাকুক না কেন সেটা বিক্রি করে হলেও ঋণ পরিশোধ করে দিতে হবে। ঋণ পরিশোধ করা ফরজ, তো আপনি যদি সত্যিই ফরজ পালনকারী হয়ে থাকেন এবং মৃত্যুর ভয় থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার এই কাজটা করা দরকার।
এইজন্য দেখা যায় যে, আমাদের দেশে ভালো ব্যক্তিদেরও কেউ সহজে ঋণ দিতে চাই না। কেননা এই যে বললাম, আমরা এমন হয়ে গেছি ঋন নেওয়াতে চালাক-চতুর কিন্তু দেওয়ার সময় খুঁজে পাওয়া যায় না। তাই অবশ্যই ঋণ পরিশোধের জন্য আমাদের প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে এবং হাতে ঋণ পরিশোধের ক্ষমতায় এলেই পরিশোধ করে দিতে হবে।
অবশেষে, আমরা আজকের এই আর্টিকেলে বিভিন্ন ঋণ পরিশোধের দোয়া শেয়ার করেছি। এই দোয়া গুলো পড়ার সাথে সাথে পরিশোধে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবেন এবং সদা সর্বদা আল্লাহ তায়ালার নিকট নামাজে বা সমস্ত ভালো পন্থায় প্রার্থনা করতে হবে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে ঋণ মুক্ত করুক ’আমিন’।