অযু ভঙ্গের কারণ গুলো কি কি জানুন বিস্তারিত

অযুর মাধ্যমে এক ধরনের পবিত্রতা অর্জন করে মুসলিমরা নামাজের জন্য প্রস্তুতি নেই। এমন নয় যে, একবার ওজু করলে সেটা দীর্ঘদিন বা অনন্তকাল পর্যন্ত থেকে যাবে। নির্দিষ্ট কিছু অযু ভঙ্গের কারণ রয়েছে, যেগুলো আপনার কাছে পাওয়া গেলে ওযু ভঙ্গ হয়ে যাবে।

সেই কারণগুলোই বা কি? আজকে সেই বিষয় নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করব। অযু ভঙ্গের মৌলিক ৭টি কারণ দেওয়া হল:

  1. পেশাব-পায়খানার রাস্তা দিয়ে কোন কিছু বের হওয়া
  2. শরীরের কোন জায়গা হইতে রক্ত, পুচ, পানি বের হইয়া গড়িয়া পাড়া
  3. মুখ বর্তি বমি হওয়া
  4. কাত বা হেলান দিয়ে ঘুম যাওয়া
  5. থুথুর সঙ্গে রক্তের ভাগ সমান বা বেশি হওয়া
  6. এমন সংগাহীনতা যাতে বোধশক্তি লোপ পায়
  7. রুকু-সিজদা বিশিষ্ট নামাজে অট্টহাসি

আগে উপরোক্ত এই মৌলিক কারণগুলো জেনে নিন যেগুলো আপনার কাছে পাওয়া গেলে ওযু ভঙ্গ হয়ে যাবে। এগুলো বোঝার জন্য আরও বিস্তারিত অনেক কিছু জানা লাগবে, কখন কিভাবে কোন কারণটা পাওয়া গেলে আপনার ওযু ভঙ্গের কারণ বলে গণ্য হবে।

অযুর দোয়া বাংলা,আরবি উচ্চারণ ও ফজিলত

যেমন যেমন উপরোক্ত কারণগুলোতে রয়েছে ”বমি” তো এখন বমি কতটুকু করলে ওযু ভাঙবে বা ভাঙবে না এই বিষয়টা জানতে হলে আর্টিকেলটা মনোযোগ সহকারে শেষ পর্যন্ত পড়বেন। এটা আপনার জ্ঞান বৃদ্ধির পাশাপাশি Ablution রিলেটেড আরো অনেক কিছু জানতে পারবেন।

ওযু ভঙ্গের ৭টি কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত

এখানে‌ উপরে যে সাতটি কারণ দেয়া হলো সেগুলো থেকে এমন কয়েকটি কারণ রয়েছে যেগুলি পাওয়া যাওয়ার পর যদি নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করে তবেই ওযু ভাঙবে। যেমন “শরীরের কোন জায়গা হইতে রক্ত, পুচ, পানি বের হইয়া গড়িয়া পাড়া” এখানে গড়িয়ে পড়ার একটা শর্ত আরোপ করা হয়েছে।

তাই যদি শরীর থেকে রক্ত বা পুচ ইত্যাদি বের হয় গড়িয়ে না পড়ে বরং আপন স্থানে বসে থাকে তাহলে অযু ভাঙবে না। ওযু ভঙ্গের কারণগুলোতে আরো অনেক ইন্টারেস্টিং এবং জানার বিষয় রয়েছে। এগুলো সম্পর্কিত বিস্তারিত আলোচনা নিচে দেয়া হল:-

এক. পেশাব-পায়খানার রাস্তা দিয়ে কোন কিছু বের হওয়া

অজু ভঙ্গের কারণসমূহের একটি হলো, পেশাব-পায়খানার রাস্তা দিয়ে কোনো কিছু বের হওয়া। প্রথম দলিল আল্লাহ তা’আলার বাণী- أَوْ جَاءَ أَحَدٌ مِّنكُم مِّنَ الْغَائِطِ এমন নিম্নভূমিকে বলা হয় যেখানে মানুষ পেশাব পায়খানা সমাধা করার জন্য যায়।

মোটকথা, আল্লাহ তা’আলা বলতেছেন, তোমাদের কেউ যদি কাযায়ে হাজাত সেরে আসে আর পানি না পায় তবে সে যেন তায়াম্মুম করে নেয়। বুঝা গেল خُروج من السيلين এর কারণে অজু ভেঙ্গে যায়। অজু না ভাঙ্গলে পানি না থাকা অবস্থায় তায়াম্মুমের নির্দেশ দেওয়া হতো না।

দ্বিতীয় দলিল: রাসূলুল্লাহ এ-কে প্রশ্ন করা হয়েছিল যে হাদাস (حدث) কী জিনিস? তিনি বলেন ما يخرج من السيلين পেশাব-পায়খানার রাস্তা দিয়ে যা-কিছু বের হয়। উক্ত হাদীসে ما শব্দটি ব্যাপক যা প্রকৃতিগত شیء معتاد যেমন- পেশাব-পায়খানা এবং অপ্রকৃতিগত غیر معتاد যেমন- কাপড়, কঙ্কর, ইসতিহাযার রক্ত ইত্যাদি। এ সব বের হওয়া অযু ভঙ্গের কারণ।

দুই. শরীর থেকে রক্ত ইত্যাদি বের হওয়া

অযু ভঙ্গের আরেকটি কারণ হলো জীবন্ত মানুষের শরীর থেকে রক্ত বা পুঁজ বের হয়ে এমন স্থান অতিক্রম করা যা ওজু বা গোসলের মধ্যে পাক করার নির্দেশ রয়েছে।

অর্থাৎ পেশাব-পায়খানার রাস্তা ব্যতীত অন্য কোনো স্থান থেকে নাজাসাত বের হওয়াই যথেষ্ট নয় বরং গড়িয়ে যাওয়া শর্ত। তাইতো রক্ত যদি ক্ষত স্থান অতিক্রম না করে তবে এর দ্বারা অজু ভঙ্গ হবে না।

তিন. মুখ বর্তি বমি হওয়া

মুখ ভরে বমি করা। চাই তা পানি, খাদ্য বা পিত্ত হোক কিংবা জমাটরক্ত। এসব কারণে উজু ভঙ্গ হয়ে যাবে। বমিতে কফ বের হলে অজু ভঙ্গ হয় না।

রাসূলুল্লাহ বলেছেন, সকল প্রবাহিত রক্তের জন্যই অযু আবশ্যক। তিনি আরো বলেছেন, নামাজ অবস্থায় কারো বমি হলে কিংবা নাক থেকে রক্ত ঝরলে সে যেন ফিরে গিয়ে অজু করে এবং পরবর্তী নামাজের ওপর “বেনা” করে যতক্ষণ না কথা বলবে।

চার. চিত বা কাত হয়ে হেলান দিয়ে ঘুমানো

অজু ভঙ্গের এটাও কারণ যে, অজুকারী ব্যক্তি কাত হয়ে কিংবা হেলান দিয়ে কিংবা এমন কিছুতে ঠেস দিয়ে ঘুমানো যে, তা সরিয়ে নিলে সে পড়ে যায়।

হযরত আনাস (রা.) বলেন- ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণ ইশার নামাযের অপেক্ষায় মসজিদে থাকতেন। এমনকি নিদ্রার কারণে তাদের মাথা ঝুঁকে যেত। এরপর তারা নামায পড়তেন, (নতুন) অযু করতেন না।'(সুনানে আবু দাউদ: ১/২৬)

শরহে নিকায়ার গ্রন্থকার লিখেন, যদি কাত হয়ে কিংবা এক নিতম্বের উপর ঠেস দিয়ে ঘুমায় তবে সর্বসম্মতিক্রমে অযু ভঙ্গ হয়ে যাবে। আর যদি এমন কিছুতে হেলান দিয়ে ঘুমায় যে, তা সরিয়ে নিলে সে পড়ে যায় তবে এর দু’টো সুরত রয়েছে।

১. যদি নিতম্ব ভূমি হতে আলাদা হয়ে যায় তবে সর্বসম্মতিক্রমে অজু ভেঙ্গে যাবে। ২. আর যদি ভূমি হতে আলাদা না হয় তবে ইমাম তাহাবী ও ইমাম কুদুরী (র.) লিখেছেন যে, অজু ভেঙ্গে যাবে। কেননা এতে তার গ্রন্থিগুলো শিথিল হয়ে পড়ে। আর ইমাম আবূ হানীফা (র.) থেকে বর্ণিত আছে যে, অজু ভঙ্গ হবে না। কেননা ভূমির উপর নিতম্ব লেগে থাকা বায়ু নির্গত হওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক (বা এতে বায়ু নির্গত হওয়ার সম্ভাবনা নেই)।

পাঁচ. থুথুর সঙ্গে রক্তের ভাগ সমান বা বেশি হওয়া

যদি থুতু ফেলার সময় থুতুর সাথে রক্ত বের হয় তাহলে সে ক্ষেত্রেও অজু ভেঙ্গে যাবে (যদি থুতুর চেয়ে রক্ত বেশি হয়) অন্যথায় ওযু ভাঙবে না।

ছয়. এমন সংগাহীনতা যাতে বোধশক্তি লোপ পায়

সংজ্ঞাহীনতা এক ধরনের রোগ বিশেষ, যা বোধ শক্তিকে দুর্বল করে দেয়। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো জ্ঞান লোপ পাওয়া, জ্ঞান লোপ পাওয়ার কারণ যাই হোক না কেন। তাছাড়া পাগল ব্যক্তির ক্ষেত্রেও একই হুকুম তথা কোন ব্যক্তি ওযু থাকা অবস্থায় পাগল হয়ে গেলে তার অজু ভেঙ্গে যাবে।

সাত. রুকু-সিজদা বিশিষ্ট নামাজে অট্টহাসি

কোন ব্যক্তি যদি রুকু-সিজদা বিশিষ্ট নামাজরত অবস্থায় অট্টহাসি দেয় তাহলে তার নামাজ এবং অজু ভেঙ্গে যাবে। কিয়াসের দাবি হচ্ছে ওজু না ভাঙ্গা, কেননা এতে কোন ধরনের নাজাসাত নির্যাস হই না, এটাই ইমাম শাফেয়ী (রঃ) এর মত।

এখানে অট্টহাসি থেকে উদ্দেশ্য হচ্ছে, ওই সমস্ত হাসি যা থেকে আওয়াজ উচ্চারণ হয় এবং পার্শ্ববর্তী লোক ও নিজে শুনতে পায়। তবে এই অট্টহাসিটা যদি কেউ এমন নামাজে দেয় যেটাতে রুকু সিজদা নেই যেমন জানাজার নামাজ ইত্যাদি তাহলে তার অজু ভাঙবে না।

পর্দা বিহীন লজ্জাস্থানে হাত দিলে উযূ ভঙ্গ হবে কি না?

পর্দা বিহীন নিজ লজ্জাস্থানে হাত দিলে এবং পুরুষ কর্তৃক মহিলাদের পর্দাবিহীন স্পর্শ করলে ইমাম আযম (রহঃ) -এর নিকট উজু ভঙ্গ হবে না। অন্য সকল ইমামের নিকট উজু ভঙ্গ হয়ে যাবে। ইমাম আহমদ (রহঃ) -এর নিকট উটের গোশত খেলে অযু ভঙ্গ হয়ে যাবে। আর সতর্কতামূলক এটাই উত্তম।

লজ্জাস্থানে দেখলে কি অযু ভেঙে যায়

লজ্জাস্থান দেখলে ওযু ভাঙবে না, কেননা উপরে যে ৭ টি কারণ দেয়া রয়েছে সেখানে এরকম কোন কথা উল্লেখ নেই। তাই কেও যদি নিজের/ অন্য কারো লজ্জাস্থান দেখে তাহলে সে ক্ষেত্রে ওযু ভাঙবে না। তবে সে ক্ষেত্রে লক্ষণীয় হচ্ছে, পেশাবের রাস্তা দিয়ে কোন কিছু বের হচ্ছে কিনা চেক করা।

পাদ দিলে কি ওযু ভেঙে যায়

হ্যাঁ অবশ্যই, পাদ দিলে ওযু ভেঙ্গে যাবে। কেননা ওপরে একটি কারণ বলা আছে যে, পেশাব-পায়খানার রাস্তা দিয়ে কোন কিছু বের হলে অজু ভেঙ্গে যাবে। যেহেতু পাদ সাধারণত পায়খানার রাস্তা দিয়ে বের হয় তাই ভেঙ্গে যাবে।

গালি দিলে কি ওযু ভাঙ্গে?

গালি দিলে ওযু ভাঙবে না, কেননা উপরো অযু ভঙ্গের কারণের মধ্যে এরকম কোন কারণ নেই। তবে মনে রাখবে গালি দেওয়া একটি গুনাহের কাজ এবং মুসলমানকে গালি দেওয়া ফাসেকি।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *