শবে কদরের ফজিলত ও দোয়া
আমরা সবাই জানি, রমজান মাস হলো, ক্ষমা ও বরকতের মাস। আর রমজান মাসের শবে কদরের রাত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাত কারণ এই রাতে পবিত্র কোরআন নাজিল হয়েছিল, যা মানবজাতির জন্য মহান আল্লাহর নির্দেশিকা।
তাই আজকের এই আর্টিকেলে আমি আপনাকে শবে কদরের ফজিলত ও দোয়া জানিয়ে দিবো। আর আপনি যদি শবে কদরের ফজিলত ও দোয়া সম্পর্কে জানতে চান তাহলে পুরো লেখাটি জুড়ে আমাদের সাথে থাকুন।
শবে কদরের গুরুত্ব বা তাৎপর্য
রমজান, মুসলমানদের কাছে শুধুমাত্র রোজা পালনের মাস নয়, বরং এটি রহমত, বরকত ও ক্ষমার মাস। এই মাস জুড়ে মমিন বান্দাগণ আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও অনুগ্রহ প্রার্থনা করে এবং ইবাদত-বন্দেগিতে নিয়োজিত থাকে। কিন্তু রমজানের মধ্যে লুকিয়ে আছে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ রাত, যা হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ – লাইলাতুল কদর।
ভাবছেন লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব কি! তাহলে শুনুন……
লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন, “নিশ্চয়ই আমি তা (কুরআন) নাজিল করেছি লাইলাতুল কদরে। আর তুমি কি জানো কী লাইলাতুল কদর? লাইলাতুল কদর হাজার মাসের চেয়ে উত্তম।” (সূরা আল-কদর: 1-3).
মহান আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করেছেন, “কদর রজনী সহস্র মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। সেই রজনীতে ফেরেশতাগণ ও রূহ অবতরণ করেন প্রত্যেক কাজে তাদের রবের অনুমতিক্রমে। শান্তিই শান্তি, সেই রজনী সুবহে সাদিক উদিত হওয়া পর্যন্ত।” (সূরা কদর, আয়াত : ৩-৫)
এই আয়াতের মর্মস্পর্শী বার্তা আমাদের হৃদয়কে আলোকিত করে, আমাদের বিশ্বাসকে দৃঢ় করে এবং আমাদের আত্মাকে উন্নত করে। কদর রজনী, যা হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ, একটি রহস্যময় ও পবিত্র রাত যা বারবার কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে।
শবে কদরের ফজিলত
রমজান মাসের শেষ দশকের অন্ধকারে লুকিয়ে থাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাত, যার নাম লাইলাতুল কদর। হাজার মাসের চেয়েও উত্তম এই রাতে আল্লাহ তায়ালা অফুরন্ত রহমত, ক্ষমা ও মুক্তি বর্ষণ করেন।
কোরআন নাজিলের রাত
এই রাতেই জিবরাইল (আঃ) পবিত্র কুরআন নিয়ে নবী মুহাম্মদ (সাঃ)-এর কাছে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “নিশ্চয়ই আমি কদর রজনীতে কুরআন অবতীর্ণ করেছি। আপনি কি জানেন, কদর রজনী কী? কদর রজনী হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। সে রাতে ফেরেশতাগণ হজরত জিবরাইল (আঃ)-এর সাথে তাদের প্রভুর আদেশে নেমে আসে সকল বিষয়ে শান্তির বার্তা নিয়ে।” (সূরা কদর)
ক্ষমা ও মুক্তির রাত
লাইলাতুল কদর কেবল কুরআন নাজিলের রাতই নয়, বরং এটি ক্ষমা ও মুক্তির রাতও বটে। যে ব্যক্তি এই রাতে ঈমান ও আন্তরিকতার সাথে ইবাদত করে তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। নবী মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি ঈমান ও ইহতিসাব (পুরস্কারের আশা) নিয়ে লাইলাতুল কদর রাতে ইবাদত করে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।” (বুখারী)
বঞ্চিত হওয়ার বেদনা
লাইলাতুল কদরের কল্যাণ ও বরকত থেকে বঞ্চিত হওয়া অত্যন্ত বেদনাদায়ক। আনাস (রাঃ) বলেন, “রাসূলুল্লাহ (সাঃ) রমজান মাস আসলে বলতেন, ‘এই মহিমান্বিত মাস উপস্থিত হয়েছে। এতে একটি রাত রয়েছে যা হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। যে ব্যক্তি এর কল্যাণ ও বরকত থেকে বঞ্চিত হল সে যেন সকল কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত হল। আর কেবল হতভাগা এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত থাকে।” (সুনানে ইবনে মাজাহ)
শবে কদরের দোয়া
হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-কে জিজ্ঞেস করেছিলেন, “যদি আমি জানতে পারি লাইলাতুল কদর কোন রাত, তাহলে আমি সে রাতে কী বলব?”
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, “তুমি বলো:
اللَّهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নী
অর্থ: হে আল্লাহ! তুমি ক্ষমাশীল, ক্ষমা করা তোমার পছন্দ। সুতরাং আমাকে ক্ষমা করে দিন।”
মহান আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে বান্দাদের জন্য অসংখ্য দোয়া শিখিয়েছেন। এর মধ্যে ক্ষমা প্রার্থনার জন্যও বহু দোয়া রয়েছে। তার মধ্যে কিছু দোয়া নিচে তুলে ধরা হলো।
رَبِّ اغْفِرْ لِي وَلِوَالِدَيَّ وَلِمَنْ دَخَلَ بَيْتِيَ مُؤْمِنًا وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ وَمَنْ أَحْسَنَ إِلَيَّ وَلَا تَزِدِ الظَّالِمِينَ إِلَّا تَضْرِيبًا
উচ্চারণ: রাব্বিগফির লি ওয়া লিওয়ালিদাইয়া ওয়া লিমান দাখালা বাইতিয়্যা মু’মিনান ওয়া লিল মু’মিনিনা ওয়া লিল মু’মিনাতি ওয়া মান আহসানা ইলাইয়া ওয়া লা তাযিদিয যালিমিনা ইল্লা তাদ্বরিবা।
অর্থ: “হে আমার পালনকর্তা! আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে, আমার ঘরে প্রবেশকারী মুমিনদেরকে, সকল মুমিন-মুমিনাকে এবং যারা আমার প্রতি উপকার করেছে তাদেরকে ক্ষমা করুন। আর যালিমদেরকে ধ্বংস ছাড়া আর কিছুই বৃদ্ধি করবেন না।”
رَبِّ اغْفِرْلِي ذَنْبِي وَمَا قَدَّمْتُ مِنْ عَمَلِي وَمَا أَخَّرْتُ وَمَا أَسْرَرْتُ وَمَا أَعْلَنْتُ أَنْتَ تَعْلَمُ الْغَيْبَ وَالشَّهَادَةَ فَاغْفِرْ لِي إِنَّكَ أَنْتَ الْعَفُوُّ الْغَفُورُ
উচ্চারণ: রাব্বিগফির লি জান্বি ওয়া মা কাদ্দামতু মিন ‘আমালাই ওয়া মা আখখারতু ওয়া মা আসরারতু ওয়া মা আ’লানতু। আনতা তা’লামুল গায়বা ওয়াশ শাহাদাতা ফাগফির লি ইন্নাকা আনতা আল ‘আফুওয়ুল গাফুর।
অর্থ: “হে আমার পালনকর্তা! আমার গুনা, আমার কর্মের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী অংশ, আমার গোপন ও প্রকাশ্য সব কিছু ক্ষমা করুন। তুমি গায়ব ও জাহির সবকিছু জানো। সুতরাং আমাকে ক্ষমা করুন। তুমিই ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”
رَبِّ اغْفِرْ لِي خَطَايَاىَ وَجَهْلِي وَإِسْرَافِي فِي أَمْرِي وَكُلَّ ذَلِكَ عِنْدَكَ مَكْتُوبٌ
উচ্চারণ: রাব্বিগফির লি খাতায়াইয়া ওয়া জাহলি ওয়া ইসরাফি ফী আমরি ওয়া কুল্লা যালিকা ‘আন্দাকা মাকতুব।
অর্থ: “হে আমার পালনকর্তা! আমার ভুল, আমার অজ্ঞতা, আমার কাজের অতিরিক্ততা এবং এসবের মধ্যে তোমার কাছে লিপিবদ্ধ সবকিছু ক্ষমা করুন।”
শবে কদর রাতের প্রস্তুতি
এই অমূল্য রাতটিকে হেলায় কাটানো উচিত নয়। বরং রমজানের শেষ দশকে ইবাদত-বন্দেগি বৃদ্ধি করে লাইলাতুল কদরের সন্ধান করা উচিত। নবী মুহাম্মদ (সাঃ) শেষ দশকে ইবাদত বৃদ্ধি করে দিতেন এবং রাত জেগে ইবাদত করতেন।
তাই আসুন আমরা সকলেই লাইলাতুল কদরের রাতের জন্য প্রস্তুত হই এবং আল্লাহ তায়ালার অফুরন্ত রহমত, ক্ষমা ও মুক্তির বরকত লাভ করি। ধন্যবাদ, ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।
শেষ কথা
আমরা আপনাদেরকে পবিত্র শবে কদরের ফজিলত ও দোয়া সম্পর্কে আমাদের এই ছোট আর্টিকেলে অত্যন্ত সাবলীল ভাষায় উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি আশা করি আমাদের আর্টিকেলটি আপনার অনেক উপকারে আসবে।