এশার নামাজ কয় রাকাত দলিল সহ জানুন
নামাজ ঈমানের ৫টি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরজ। এই পাঁচ ওয়াক্তের মধ্যে এশার নামাজেরও বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এটি দিনের শেষ নামাজ, আর এরপরই পড়া হয় বেতরের নামাজ।
এশার নামাজ কয় রাকাত এই প্রশ্নটি অনেকের মনেই ঘুরপাক খায়। এই আর্টিকেলে আমরা এই প্রশ্নের উত্তর বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব। এছাড়াও আমরা এশার নামাজের ফজিলত, নিয়ম-কানুন এবং বিভিন্ন মতামত সম্পর্কেও আলোচনা করব অন্য আরেকটা পোস্টে ইনশাআল্লাহ।
এশার নামাজ কয় রাকাত
ইশার নামাজ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে শেষ নামাজ এবং ঘুমের পূর্বে পড়া হয়। এই নামাজের সাথে বিভিন্ন রাকাআত সম্পর্কিত বিধান রয়েছে, যা নিচে দেওয়া হল:
- সুন্নত:
- ইশার ফরয নামাজের আগে ৪ রাকাআত সুন্নাত নামাজ পড়া উত্তম।
- সময় কম হলে ২ রাকাআত পড়া যায়।
- সুন্নাত নামাজ না পড়লে গুনাহ হবে না।
- ফরয:
- ইশার ফরয নামাজ ৪ রাকাআত।
- সুন্নত:
- ফরয নামাজের পরে ২ রাকাআত সুন্নাত নামাজ পড়া মুয়াক্কাদাহ।
- এটি কখনোই ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়।
- নফল:
- ইশার নামাজের পর ২ রাকাআত নফল নামাজ পড়া উত্তম।
- তবে এটি ওয়াজিব নয়।
বিতর প্রসঙ্গে – এটা কি ইশার নামাজের অংশ? রাতের নামাজের সমাপ্তি ঘটে বিতরের মাধ্যমে, এই নামাজে রাকা’ত সংখ্যা অবশ্যই হবে বেজোড়। যারা শুধুমাত্র এশা পড়ে থাকেন, তাদের জন্য বিতর এশা’র অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়।
অন্যদিকে, যারা তাহাজ্জুদ, কিয়ামুল্লাইল ইত্যাদি নামাজ পড়েন, তাদের জন্য বিতর উক্ত নামাজের অংশ হিসেবে পালিত হয়। তবে, এর গুরুত্ব বিবেচনা করে এটি ওয়াজিব নামাজ হিসেবে গণ্য করা হয়।
উত্তর দিয়েছেন : আল্লামা মুফতি উবায়দুর রহমান খান নদভী
ইশা রাকাত সংখ্যা সম্পর্কে হাদিস
যে ইশার আগে চার রাকাআত নামায পড়ল সে যেন তাহাজ্জুদ নামায আদায় করল। আর যে ইশার পরে চার রাকাআত পড়ল সে যেন শবে কদরে চার রাকাআত নামায আদায় করল। ইমাম বায়হাকী (রহ.) এ বর্ণনা হযরত আয়েশা (রা.)-এর বাণী হিসেবে এবং নাসায়ী ও দারাকুতনী কা’ব (রা.)-এর বাণী হিসেবে বর্ণনা করেছেন। (আদ-দিরায়াহ: ১/১৫১)
হযরত সায়ীদ ইবনে জুবায়ের (রহ.) বলেন – সাহাবায়ে কেরাম ইশার আগে চার রাকাআত নামায পড়া পছন্দ করতেন।
উন্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত- তাঁকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামায সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল। উন্মুল মুমিনীন বললেন, ‘তিনি মসজিদে ইশার নামায পড়ে ঘরে আসতেন এবং চার রাকাআত নামায পড়ে বিছানায় যেতেন। (সুনানে আবু দাউদ: ১/১৯১)
হযরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত- নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন রাকাআত বিতর পড়তেন এবং প্রতি রাকাআতে তিন সূরা করে তিন রাকাআতে নয় সূরা পড়তেন। সর্বশেষ সূরাটি হত সূরা ইখলাস।’ (জামে তিরমিযী: ১/১০৬)
আবু সালামা বলেন, আমি হযরত আয়েশা (রা.)কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামায সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন- তিনি তেরো রাকাআত নামায পড়তেন। আট রাকাআত পড়তেন এরপর বিতর পড়তেন, এরপর দুই রাকাআত নামায বসে পড়তেন।
১/ প্রথম রেওয়ায়েত থেকে জানা যাচ্ছে, সাহাবীগণ ইশার আগে চার রাকাআত নামায পড়া মুস্তাহাব মনে করতেন।
২/ দ্বিতীয় রেওয়ায়েত থেকে জানা যাচ্ছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইশার পরে চার রাকাআত নামায পড়তেন। অর্থাৎ দুই রাকাআত সুন্নত ও দুই রাকাআত নফল।
৩/ তৃতীয় রেওয়ায়েত থেকে জানা যাচ্ছে, তিনি তিন রাকাআত বিতর পড়তেন।
৪/ চতুর্থ রেওয়ায়েত থেকে জানা যাচ্ছে, বিতরের পর দুই রাকাআত নফল বসে আদায় করতেন।
এশার নামাজ কয় রাকাত সুন্নত কয় রাকাত ফরজ
এশার নামাজের ৪ রাকাত ফরজ। প্রতিটি রাকাতে ফাতেহা সুরা এবং অন্য কোনো সুরা তিলাওয়াত করতে হয়। ফরজ নামাজ জামাতে পড়তে হয়।
এশার নামাজের ৪ রাকাত সুন্নত, এটি ফরজ নামাজের পূর্বে পড়া হয়। আর ফরজ নামাজের পর ২ রাকাত সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। আর প্রথম রেওয়ায়েত থেকে জানা যাচ্ছে, সাহাবীগণ ইশার আগে চার রাকাআত নামায পড়া মুস্তাহাব মনে করতেন।