নফল,‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌সুন্নত এবং ফরজ নামাজের নিয়ম [চার,তিন,দুই রাকাত]

দৈনন্দিন জীবনে আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করে দিয়েছেন। কিছু ফরজ নামাজ দুই রাকাত, তিন রাকাত আবার কিছু ফরজ নামাজ আছে ‌চার রাকাতের। দুই রাকাত ফরজ নামাজের ‌আলাদা নিয়ম, তিন রাকাত ফরজ নামাজের আরেক নিয়ম, আবার চার রাকাত ফরজ নামাজ পড়তে ভিন্ন আরেকটি নিয়ম রয়েছে।

তবে প্রায় পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের মধ্যে ৯০% মিল রাখে। দুর্ভাগ্য হলেও সত্য, বর্তমানে ইসলাম ছড়িয়ে যাওয়ার পরেও অনেক মুসলমান আছে যারা কিনা ফরজ নামাজের নিয়ম সম্পর্কে জানে না। না জানার অনেকগুলো কারণ রয়েছে যেমন নতুন মুসলিম হওয়া, মাদ্রাসা-মকতবে না পড়া ইত্যাদি।

সকল নামাজ শিখতে ক্লিক করুন

তাই আজকে আমি চিন্তা করলাম আপনাদের সাথে এমন একটা আর্টিকেল শেয়ার করতে, যেখানে সবগুলো বিস্তারিতভাবে দেয়া থাকবে দুই রাকাত, তিন রাকাত এবং চার রাকাত ফরজ নামাজের নিয়ম সম্পর্কে। আপনি যদি মনে করেন যে, এ বিষয়টা জানা আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ, তাহলে অবশ্যই আর্টিকেলটি শেষ ‌পর্যন্ত পড়বেন।

ফরজ নামাজের নিয়ম

এখন আমি আপনাদের সাথে স্টেপ বাই স্টেপ শেয়ার করব কিভাবে দুই, তিন, চার রাকাত ফরজ পড়বেন, অত্যন্ত জরুরী একটা বিষয়। আমাদেরকে দৈনিক তিন ওয়াক্ত ফরজ নামাজ চার রাকাত ‌করে পড়তে হয়, এক ওয়াক্ত নামাজ (ফজর) দুই রাকাত, আবার এক ওয়াক্ত নামাজ (মাগরিব) দুই রাকাত। আপনি যদি স্টেপ বাই স্টেপ ফরজ, নফল, সুন্নত নামাজ কিভাবে পড়তে হয় এ বিষয়টি জানতে চান তাহলে নিচের স্টেপ গুলো ফলো করুন:-

Need Attention:- মহিলা এবং পুরুষের নামাজের মধ্যে অনেকগুলো পার্থক্য রয়েছে এবং সেগুলো জানতে এখানে ক্লিক করুন। আর এখানে যে নিয়ম গুলো দেওয়া আছে সেগুলো পুরুষের।

আল্লাহু আকবার বলে হাত বাঁধুন

প্রথমে কিবলামূখী হয়ে দাঁড়ান, তারপর কোন নামাজ পড়বেন মনে মনে নিয়ত করুন যেমন “আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে জোহরের চার রাকাত ফরজ নামাজ আদায় করতেছি”। তারপর দুই হাত কান পর্যন্ত উঠান (হাতের আঙ্গুল এবং তালু কিবলামূখী থাকবে। সুতরাং দুই হাত কানের লতির নিচ পর্যন্ত তুলে ‘আল্লাহু আকবার’ বলে নাভির নিচে হাত বাঁধুন। হাত বাঁধার সময় অবশ্যই বাম হাতের উপরে ডান হাত রাখবেন নাভীর নিচে, আর দৃষ্টি থাকবে সিজদার স্থানে।

সূরা ফাতিহা পড়ে সূরা মিলান

এবার অনুচ্চস্বরে ‘সুবহানাকাল্লাহুম্মা’ পড়ুন এবং ‘আউযুবিল্লাহ…’, ‘বিসমিল্লাহ…’ পড়ে সূরা ফাতিহা পড়ুন। এরপর অনুচ্চস্বরে আমীন বলে অন্য একটি সূরা কিংবা একটি বড় আয়াত বা ছোট তিন আয়াত তেলাওয়াত করুন। ইমামের পিছনে নামায পড়লে ‘সুবহানাকাল্লাহুম্মা…র পর কিরাত পড়া যাবে না।

রুকূতে যান

এরপর ‘আল্লাহু আকবার’ বলতে বলতে রুকূ করুন। রুকূতে পিঠ সোজা থাকবে এবং হাতের আঙুলগুলো ফাঁকা ফাঁকা করে শক্ত করে হাটু ধরতে হবে। রুকুতে তিন বার বা পাঁচ বার বা‌ সাত বার তাসবীহ ( سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيْم) পড়ুন।

রুকূ থেকে সোজা হয়ে দাঁড়ান

এরপর ‘সামিআল্লা…’ বলতে বলতে সোজা হয়ে দাড়ান এবং ‘রাব্বানা লাকাল হামদ’ বলুন। ইমামের পিছনে থাকলে ইমাম ‘সামিআল্লাহু…’ বলবেন আর মুক্তাদী শুধু ‘রাব্বানা লাকাল হামদ’ বলবে।

সিজদা করুন

এরপর ‘আল্লাহু আকবার’ বলতে বলতে সাজদায় যান। সাজদায় যথাক্রমে দুই হাটু, দুই হাত, নাক এবং সবশেষে কপাল ভূমিতে রাখুন। হাতের আঙুলগুলো কিবলামুখী থাকবে। কনুই পাঁজর থেকে এবং পেট উরু থেকে আলাদা থাকবে। কনুই ভূমিতে বিছানো যাবে না। সাজদায় তিন বার বা পাঁচ বার তাসবীহ ( سُبحانَ ربِّيَ الأعلَى ) পড়ুন।

বসুন

যথাক্রমে কপাল, নাক এবং সবশেষে হাত উঠিয়ে তাকবীর বলতে বলতে বসুন।

দ্বিতীয় সিজদা করুন

পুনরায় তাকবীর বলতে বলতে দ্বিতীয় সাজদা করুন। আর সিজদার মধ্যে তাকবির ( سُبحانَ ربِّيَ الأعلَى ) তিনবার/পাঁচবার/সাতবার পড়ুন।

পুনরায় দাঁড়ান

তাকবীর বলতে বলতে উঠুন। ওঠার সময় যথাক্রমে কপাল, নাক, হাত সবশেষে হাটু ভূমি থেকে উঠিয়ে সোজা দাড়িয়ে যান। দাড়িয়ে হাত বাঁধুন এবং ‘বিসমিল্লাহ…’ সূরা ফাতিহা ও অন্য একটি সূরা পড়ুন। ইমামের পিছনে হলে কিরাত পড়বেন না।

এরপর পূর্বের নিয়মে রুকু, কাওমা, সাজদা, জলসা এবং দ্বিতীয় সাজদা করুন। সাজদা থেকে উঠে বাম পা বিছিয়ে তার উপর বসুন এবং ডান পা খাড়া রাখুন ও দুই হাত উরুর উপর রাখুন। (হাতের আঙুলের অগ্রভাগ হাটু বরাবর থাকবে) এবার ‘আত্তাহিয়্যাতু…’ পড়ুন। “আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু” পর্যন্ত পৌঁছলে মধ্যমা ও বৃদ্ধাঙ্গুলের মাথা পরস্পরের সঙ্গে মিলিয়ে গোলক তৈরি করুন, কনিষ্ঠা ও অনামিকা মুড়ে তালুর সাথে লাগিয়ে রাখুন এবং তর্জনী উঠিয়ে ইশারা করুন।

‘লা-ইলাহা’ বলার সময় তর্জনী উঠবে ‘ইল্লাল্লাহু’ বলার সময় নামবে। এরপর বৈঠকের শেষ পর্যন্ত ডান হাত এ অবস্থাতেই থাকবে।

দুই রাকাত নামাজের নিয়ম:- দুই রাকাআত বিশিষ্ট নামায হলে ‘আত্তাহিয়্যাতু’ শেষ হওয়ার পর দরূদ শরীফ পড়ুন। এরপর দুআ পড়ে ডানে বামে সালাম ফিরিয়ে নামায শেষ করুন।

তিন এবং চার রাকাত নামাজের নিয়ম:- যদি তিন বা চার রাকাআত বিশিষ্ট নামায হয় তাহলে ‘আত্তাহিয়্যাতু’র পর দরূদ শরীফ না পড়ে তাকবীর বলতে বলতে দাড়িয়ে যান। এরপর তিন রাকাতের নামাজ হলে বাকি এক রাকাত, যদি চার রাকাতের নামাজ হয় বাকি দুই রাকাত পড়ুন। বাকি ৩/৪ রাকাত শেষ হওয়ার পর বসে ‘আত্তাহিয়্যাতু’ শেষ হওয়ার পর দরূদ শরীফ পড়ুন। এরপর দুআ পড়ে ডানে বামে সালাম ফিরিয়ে নামায শেষ করুন।

Need attention:- ফরয নামাযের তৃতীয় ও চতুর্থ রাকাআতে সূরা ফাতিহার পর অন্য সূরা পড়া জরুরী নয়। তবে সুন্নত ও নফল নামাযে তৃতীয় ও চতুর্থ রাকাআতেও সূরা মিলানো জরুরী।

ফজরের দুই রাকাত সুন্নত নামাজ পড়ার নিয়ম

ফজরের দুই রাকাত সুন্নত নামাজ পড়ার জন্য প্রথমে উত্তমরুপে অজু করুন। তারপর নিয়ত বাঁধুন এই বলে যে, আমি পশ্চিম দিকে মুখ করে দুই রাকাত ফজরের সুন্নতে মুয়াক্কাদা আদায় করতেছি। তারপর নাভির নিচে বাম হাতের উপর ডান হাত দিয়ে শক্ত করে হাত বাঁধুন।

আরো পড়ুন:-গর্ভবতী মায়ের নামাজের নিয়ম

অবশ্যই সে ক্ষেত্রে নামাজের যে শর্ত-শরায়েত রয়েছে সেগুলো আগে পূরণ করতে হবে। তারপর আমি উপরে যে স্টেপ বাই স্টেপ গাইড শেয়ার করেছি, কিভাবে ‌দুই/তিন এবং চার রাকাত নামাজ কিভাবে পড়তে হয় সেটা ফলো করুন।

ফজরের দুই রাকাত সুন্নত নামাজের নিয়ত :- নিয়ত আপনি চাইলে আরবিতে করতে পারেন, চাইলে আবার বাংলাতেও করা যায় যেমন আমি ক্বিবলামূখী ফজরের দুই রাকাত সুন্নাতে মোয়াক্কাদা আদায় করতেছি।

আরো পড়ুন: তারাবির নামাজ

মাগরিবের তিন রাকাত ফরজ নামাজের নিয়ত ও নিয়ম

নিয়ম:- মাগরিবের তিন রাকাত ফরজ নামাজ কিভাবে আদায় করতে হয় এ বিষয়টি জানতে চাইলে আপনাকে আর্টিকেলটি শুরু থেকে পড়ে আসতে হবে। কেননা আমি ওপরে শেয়ার করেছি কিভাবে আপনি দুই তিন এবং চার রাকাত নামাজ কিভাবে পড়তে হয়।

নিয়ত: আমি কিবলামুখী হয়ে মাগরিবের তিন রাকাত ফরজ নামাজ আদায় করতেছি।

৫ টি ফরজ নামাজ কি কি?

আল্লাহতালা আমাদেরকে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন আর সেগুলো হচ্ছে ফজর, যোহর, আসর, মাগরিব এবং ইশা’র নামাজ।

প্রথম ফরজ নামাজ কোনটি?

আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে যে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন তার মধ্যে সর্বপ্রথম হচ্ছে ফজরের দুই রাকাত ফরজ নামাজ।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *